গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত - গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ গর্ভাবস্থায় আপনার বাচ্চার ওজনের উপর নির্ভর করে বাচ্চার সুস্থতা। তাই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট সম্পর্কে আমাদের সঠিকভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট, কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে, গর্ভাবস্থায় কী করণীয় সমস্ত বিষয় নিয়ে। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত - গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট
- গর্ভাবস্থায় ৮ মাসে বাচ্চার ওজন জেনে নিন
- কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন বেশি হওয়ার কারণ
- গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থার বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
- গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
- লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত এটি জেনে রাখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজনের উপর নির্ভর করে বাচ্চার সুস্থতা। সাধারণত গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিক (১-১২ সপ্তাহ) এই সময়ে ভ্রুণটি একেবারে ছোট থাকে এবং তার ওজন ১-২ গ্রাম হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শুধুমাত্র অঙ্গ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ) এই সময় বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
২০ সপ্তাহ পর বাচ্চার ওজন সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ) এই পর্যায়ে বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, সাধারণত ৩২ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার ওজন প্রায় ১.৮ কেজি হয়। আর ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার ওজন ২.৫ কেজি থেকে ৩ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার ওজন সাধারণত ২.৫ কেজি থেকে ৪ কেজির মধ্যে হয়। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার সঠিক ওজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা কালো হয়
গর্ভাবস্থায় মাতার খাদ্যাভাস ও স্বাস্থ্যগত
অবস্থার ওপর বাচ্চার ওজন নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় খুব কম বা বেশি বাচ্চার
ওজন আপনার বাচ্চার ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণে পর্যাপ্ত পুষ্টি
এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য
করে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার সঠিক ওজন এবং বিকাশ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে নিয়মিত আলট্রাসাউন্ড এবং
স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত ।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট থেকে আমাদের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজনের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন আদর্শ পরিমাণের থেকে কম হয় তাহলে বাচ্চা অপুষ্ট এবং অসুস্থ হয়ে পৃথিবীতে আসতে পারে। তাই অবশ্যই আমাদের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজনের চার্ট এর উপর লক্ষ্য রাখা উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি বাচ্চার ওজন যে একই রকম হবে বিষয়টি এমন নয়।
এটি সম্পূর্ণ ভ্রূণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রথম ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রূণের তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না এবং ২০ সপ্তাহের পর থেকে ভ্রূণের আকার এবং ওজন পুরোপুরি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। নিচে আমরা গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজনের চার্ট তুলে ধরেছি যা থেকে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেনঃ
সপ্তাহ | দৈর্ঘ | ওজন |
---|---|---|
সপ্তাহ ৮ | ১.৬ সেন্টিমিটার | ১ গ্রাম |
সপ্তাহ ১০ | ৩.২ সেন্টিমিটার | ৪ গ্রাম |
সপ্তাহ ১২ | ৫.৩ সেন্টিমিটার | ১৪ গ্রাম |
সপ্তাহ ১৪ | ৮.৬ সেন্টিমিটার | ৪২ গ্রাম |
সপ্তাহ ১৬ | ১১.৬ সেন্টিমিটার | ১০০ গ্রাম |
সপ্তাহ ১৮ | ১৪.১ সেন্টিমিটার | ১৮০ গ্রাম |
সপ্তাহ ২০ | ১৬.৫ সেন্টিমিটার | ৩০০ গ্রাম |
সপ্তাহ ২২ | ২৭.৬ সেন্টিমিটার | ৪২০ গ্রাম |
সপ্তাহ ২৪ | ২৯ সেন্টিমিটার | ৬০০ গ্রাম |
সপ্তাহ ২৬ | ৩৫.৬ সেন্টিমিটার | ৭৫০ গ্রাম |
সপ্তাহ ২৮ | ৩৭.৫ সেন্টিমিটার | ১০০০ গ্রাম |
সপ্তাহ ৩০ | ৪০ সেন্টিমিটার | ১৩২০ গ্রাম |
সপ্তাহ ৩২ | ৪২.৫ সেন্টিমিটার | ১৭০০ গ্রাম |
সপ্তাহ ৩৪ | ৪৫ সেন্টিমিটার | ২১৪৬ গ্রাম |
সপ্তাহ ৩৬ | ৪৭.৫ সেন্টিমিটার | ২৬২৫ গ্রাম |
সপ্তাহ ৩৮ | ৪৯.৮ সেন্টিমিটার | ৩০৮৩ গ্রাম |
সপ্তাহ ৪০ | ৫১.২ সেন্টিমিটার | ৩৪৬২ গ্রাম |
সপ্তাহ ৪২ | ৫১.৬ সেন্টিমিটার | ৩৬৮৫ গ্রাম |
গর্ভাবস্থায় ৮ মাসে বাচ্চার ওজন জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় ৮ মাসে বাচ্চার ওজন প্রায় ২ কেজি হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ৮ মাস কত সপ্তাহ? গর্ভাবস্থায় ৮ মাস হচ্ছে ৩১ থেকে ৩৩ সপ্তাহ। আমরা উপরোক্ত চার্ট থেকে যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো ৩১ থেকে ৩৩ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন প্রায় ২ কেজির মতো হয়ে থাকে এবং এই সময় বাচ্চার দৈর্ঘ্য ৪৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ৯ মাসে বাচ্চার ওজন? গর্ভাবস্থায় ৯ মাস কত সপ্তাহ? গর্ভাবস্থায় ৯ মাস হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ সপ্তাহ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি ও তোকমার উপকারিতা
এই সময় বাচ্চার ওজন প্রায় ২.৫ কেজি থেকে প্রায় ৩ কেজির কাছাকাছি হয়ে থাকে এবং এই সময় বাচ্চার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। অবশ্যই গর্ভাবস্থায় আমাদের বাচ্চার সঠিক ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় সন্তানের ওজন আদর্শ পরিমাণের থেকে অতিরিক্ত বেশি হলেও তা আমাদের সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুকিসহ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আদর্শ পরিমাণের থেকে ওজন কম হলেও বাচ্চার জন্মের পর অপুষ্টি এবং অসুস্থতা দেখা দিবে।
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে এই বিষয়টা জেনে রাখা আমাদের জন্য আনেক
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে আমাদের দেশে অনেক শিশু অপুষ্টি ও
রোগাক্রান্ত হয়ে ভোগে। এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে বাচ্চার ওজন,
উচ্চতা, মেধা, সুস্থতা, শারীরিক গঠনে সমস্যা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় একজন মাকে নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
সাধারণত একজন সুস্থ গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি পেলেই যথেষ্ট। প্রথম ত্রৈমাসিকে ( ১ - ১২ সপ্তাহ ) অনেকের বমি ও বমি বমি প্রবণতা থাকে ফলে খাবারের প্রতি অনেক অরুচি দেখা যায়। তাই এই সময় ওজন বৃদ্ধি না পেলেও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে খাবার বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধি করতে হবে। জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে শিশুর অপুষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে। তাই চলুন জেনে নিই কি খেলে গর্ভের বাচ্চারা ওজন বাড়েঃ
ফল ও সবজি - প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও আশঁ থাকে ফল ও সবজিতে।
যা গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক
বৃদ্ধি ও বিকাশের সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় কলা, আপেল, পাকা পেয়ারা,
ড্রাগন, স্ট্রবেরি এই ফলগুলো খেতে পারেন। এছাড়াও ভিটামিন সি যুক্ত ফল যেমনঃ
লেবু, কমলালেবু, বাতাবি লেবু, গর্ভাবস্থায় এই ফলগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া
উচিত, তরতাজা সবজি দিয়ে স্যুপ বানিয়েও খেতে পারেন।
প্রোটিন - গর্ভাবস্থায় প্রোটিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা শিশুর মাংস, ত্বক, অঙ্গের গঠন বৃদ্ধি করে এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছ, মাংস, ডাল, পনির এবং ডিম এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন।
দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার - দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমনঃ দই, মিষ্টি, পনির, ঘি এগুলো অনেক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় গঠনের পাশাপাশি শিশুর ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক গঠনেও অনেক সহায়তা করে। এছাড়াও ডিমের কুসুম, কলিজা, কমলা, কচু-শাক, ছোট-মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম।
গোটা শস্য - গোটা শস্য যেমন চাল, রুটি, ওটমিল ইত্যাদি খাবারের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আঁশ ও ভিটামিন বি। যা শিশুর শারীরিক গঠন সহ শিশুর ওজন বৃদ্ধিতেও অনেক সাহায্য করে।
আইরন - অনেকের গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। যা গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন কিংবা শারীরিক বিকাশে অনেক বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য আয়রন জাতীয় খাবার যেমন পাঁচমিশালী ডাল, পালং-শাক, কলিজা এগুলো পরিমিত গ্রহণ করা উচিত। আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আইরন ট্যাবলেটও গ্রহণ করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন বেশি হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন বেশি হওয়ার কারণ, একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণ থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তার শরীরে নানা পরিবর্তন ও ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এই সময় একজন গর্ভবতী মায়ের অনেক পুষ্টি ও যত্নের প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে এখনো এই বিষয়টি বিশ্বাস করা হয় যে সন্তান ধারণ করলে শুরু থেকেই দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে, প্রচুর ভাত খেতে হবে, শুধু ঘুমাতে হবে আসলে বিষয়টি এমন নয়। আবার অনেকেই এমনটাও ভাবেন যে এই সময় বাড়তি কোনো যত্নের প্রয়োজন নেই।
আসলে এই বিষয়টিও ঠিক নই, অবশ্যই বাড়তি যত্নের প্রয়োজন আছে তবে সেটা মাত্রা অতিরিক্ত নয়।একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় ৯ থেকে ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই ওজন যদি কেউ ২৫ থেকে ৩০ কেজি বাড়িয়ে ফেলেন তা সন্তানসহ গর্ভবতী মায়ের অনেক স্বাস্থ ঝুঁকির জন্য দায়ী।মায়ের ওজন অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও অনেক সময় আলট্রাসনোগ্রাফিতে দেখা যায় বাচ্চার ওজন তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শুধু আপনার ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে এক্ষেত্রে বাচ্চার কোন ওজন বৃদ্ধি পায়নি বাচ্চার ওজন ঠিকভাবে বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই পুষ্টি সম্মত খাবার পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।নিয়মিত চেকাবের মাধ্যমে বাচ্চার এবং গর্ভবতী মায়ের ওজন যেন অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা কম না হয় সেই বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত একজন গর্ভবতী মাকে এই বিষয়টি অবশ্যই নজর রাখতে হবে। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় ওজন ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। তবে গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি সবার ক্ষেত্রে একই রকম হবে বিষয়টি এমন নয়। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম ওজন হতে পারে, এটি নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন কেমন ছিল তার উপর।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা জেনে নিন
যাদের বিএমআই ১৯ এর কম তাদের ক্ষেত্রে ওজন ১৭ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক আর যাদের বিএমআই ২৫ এর বেশি তাদের ক্ষেত্রে ৭ কেজি ওজন বাড়লেও তা যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। বিএমআই হচ্ছে বডি মাস ইন্ডেক্স, যা উচ্চতা আর ওজনের অনুপাত। গর্ভকালীন ৯ মাসকে ৩ ভাগে ভাগ করলে ওজন বৃদ্ধির একটি আদর্শ মাত্রা এমন হবে-
- প্রথম ৩ মাসে সামগ্রিকভাবে ০.৫-২.৫ কেজি
- দ্বিতীয় ৩ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি
- তৃতীয় ৩ মাসে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলেও তা ক্ষতির কারণ সৃষ্টি হতে পারে এবং
অতিরিক্ত ওজন কম হলেও তা গর্ভের সন্তানের অপুষ্টি, ওজন কম ও আকারে ছোট হতে
পারে।
গর্ভাবস্থার বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে আপনি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এই সময় মায়েদের শারীরিক থেকে শুরু করে অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়। এই সময় অতিরিক্ত শুয়ে থাকা স্বাস্থের পক্ষে মোটেও ভালো নই, চলুন জেনে নিয়ে গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেনঃ
- শরীরের পানির স্তর কমে যাওয়া
- রক্তচাপ বারে যাওয়া
- পেটের বাচ্চার অসুস্থতা দেখা দেওয়া
- গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
- গর্ভের সন্তানের মাথা বড় হয়ে যাওয়া
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে এছাড়াও আরো কিছু স্বাস্থ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। তাই অবশ্যই আমাদের গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকা উচিত নয়। আবার এমনটিও নয় যে আপনি গর্ভাবস্থায় ঘুমাবেন না, অবশ্যই একজন গর্ভবতী মায়ের ৭ থেকে আট ৮ ঘুমানো উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক শারীরিক কাজকর্ম এবং নিয়মিত গর্ভাবস্থার ব্যায়াম করা সুস্থ গর্ভাবস্থায় এবং সুস্থ সন্তানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ এই বিষয় সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। কারণ একজন মেয়ের জন্য গর্ভাবস্থা হচ্ছে অনেক স্বপ্নের একটি সময়। কোন একটি ভুল কাজ বা কোন একটি কারণে আপনার এই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই অবশ্যই গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভাবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে খাওয়া-দাওয়া, চলা ফেরা থেকে লাইফস্টাইল সবকিছুতেই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধঃ
- গর্ভাবস্থায় অবশ্যই যেকোনো ধরনের ভারী কাজ থেকে বিরত থাকুন। যেমনঃ টিউবয়েল চাপা, ধান ভানা, ভারি জিনিস উঠানো ইত্যাদি।
- গর্ভাবস্থায় শরীরে ঝাকি লাগে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত এমন কি দূরে ভ্রমণ থেকেও বিরত থাকা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় অবশ্যই ঘর ঝাড়ু দেওয়া এবং ঝুকে মেঝে পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় কোন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার বা কোন কিছু পরিষ্কার করবেন না। আপনি বেকিং সোডা, লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে এই কাজগুলো করতে পারেন।
- দাঁড়িয়ে থেকে সবজি কাটা বা থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ করবেন না। অবশ্য মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি একটানা দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়।
- উঁচুতে উঠে করতে হবে এমন কাজ গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত যেমনঃ পর্দা টানানো বা ফ্যান পরিষ্কার।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত আমাদের সেই খাবারগুলো সম্পর্কে। নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ প্রতিটি মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য তো অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মিত খাবার গ্রহণ করা। কারণ গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে সেই ভিটামিন গর্ভের সন্তানের কাছে পৌঁছায়। তাই অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন ও পুষ্টিকরযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
আমরা গর্ব অবস্থায় অনেক সময় উপকারের জন্য এমন কিছু খাবার খেয়ে থাকি যাতে উপকার এর থেকে ক্ষতির কারণ হয় বেশি। তাই অবশ্যই গর্ভাবস্থায় আমাদের কি কি খাবার খাওয়া যাবে না এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
চা ও কফি - গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ ক্যাফেইন সরাসরি মায়ের প্লাসেন্টা তে গিয়ে বেবির হৃদপিন্ডে ভূমিকা রাখে। একজন গর্ভবতী মা দিনে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেন গ্রহণ করতে পারেন তাই অবশ্যই আমাদের গর্ভাবস্থায় চা ও কফি এড়িয়ে চলা উচিত।
যে কোন ঔষধ - আমরা অনেক সময় টুকটাক সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথার জন্য নিজেরাই ফার্মেসি থেকে যে কোন ওষুধ কিনে খেয়ে নি। গর্ভাবস্থায় এই কাজটি কখনোই করা চলবে না কারণ যে কোন শারীরিক সমস্যার জন্য গর্ভবতী মহিলার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কখনোই নিজে থেকে যেকোন ওষুধ খাবেন না এতে করে কিন্তু গর্ভপাতের মত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
কাঁচা মাছ মাংস - গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাছ মাংস খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন। এমনকি গর্ভাবস্থায় কাঁচা বাধা আধা সিদ্ধ ডিম খাওয়া থেকেও নিজেকে বিরত রাখবেন।
পনির বা চীজ - গর্ভাবস্থায় পনির বা চীজ জাতীয় খাবার থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় আমাদের একটু ক্ষুধার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা অনেকেই হয়তো বার্গার খেতে পছন্দ করি বার্গারে থাকে প্রচুর পরিমাণ পনির এবং চীজ। পনির বা চীজ জাতীয় খাবার গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং সন্তানের উভয়ের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক তাই গর্ভাবস্থায় এই জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।
কলিজা - কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা গর্ভাবস্থায় প্রথমের দিকে আপনার সমস্যার কারণ হতে পারে। আপনার গর্ভাবস্থায় কি পরিমাণ ভিটামিনের প্রয়োজন ডক্টরের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী খাবার খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভাবস্থা এটি একজন মেয়ের জন্য পৃথিবীর অন্যতম সুখের ভিতরে একটি। প্রত্যেকটি মেয়েই স্বপ্ন দেখে তার একটি সুন্দর, সুস্বাস্থ্যবান, মেধাবী সন্তান, পৃথিবীতে আসুক। তাই সকল বিষয়ে অন্যান্য সময়ের থেকে গর্ভাবস্থায় আমাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ কিছু ছোট ভুলের কারণেও আপনার এই স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই গর্ভাবস্থায় খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা ও লাইফ স্টাইলসহ সকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
"গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত" এই পোস্টের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত? গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন কত হওয়া উচিত? গর্ভ অবস্থায় করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে অনেক উপকৃত হবেন। সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, অনলাইন ইনকাম ও লাইফস্টাইল সহ অন্যান্য ক্যাটাগরির আপডেট তথ্যগুলো পড়তে আমাদের হোম পেজটি ভিজিট করুন।
RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।
comment url