ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম

ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম জেনে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পানির অপর নাম জীবন হলেও দূষিত পানিই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ। এজন্য পানি পান করার আগে সেই পানিকে বিশুদ্ধ করে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ফিটকিরি-দিয়ে-পানি-বিশুদ্ধ-করার-নিয়ম

বন্যার সময় বা বন্যার পরবর্তী সময় পানি বাহিত রোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ এই সময় বিশুদ্ধ পানির বা নিরাপদ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। তাই চলুন আমরা জেনে নেই ফিটকিরি, ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম।

পোস্ট সূচীপত্রঃ ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম

ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম

ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম জেনে রাখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পানি পান করার সময় অবশ্যই আমাদের বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পানির অপর নাম জীবন হলেও দূষিত পানি পান করার ফলে তা আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বন্যার সময় এবং বন্যা পরবর্তীকালে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। বন্যার সময় পানি ফুটিয়ে পান করার মতো পরিবেশ থাকে না তখন আমরা ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ করতে পারি।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য প্রথমেই আপনাকে ফিটকিরির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত প্রতি লিটার পানির জন্য ১ থেকে ২ গ্রাম ফিটকিরি ব্যবহার করা যায়। ফিটকিরির বড় বড় টুকরো হলে তা গুড়ো করে নিতে হবে। পানির পরিমাণের ওপর নির্ধারণ করে ফিটকিরির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এরপর উক্ত পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে দিতে হবে। ফিটকিরি মিশ্রণ পানিটিকে ২ থেকে ৩ ঘন্টায় রেখে দিতে হবে।

ফিটকিরি মিশ্রণ পানিটি ২ থেকে ৩ ঘন্টায় রেখে দেওয়ার পর পানির উপরের অংশটা খুব সাবধানে আলাদা করে নিতে হবে। আর নিচে জমে থাকা ফিটকিরির অশুদ্ধি অবশিষ্ট অংশ আলাদা করে ফেলে দিতে হবে। মিশ্রণের ওপর থেকে আলাদা করা পানি এখন বিশুদ্ধ এবং তা পান করার জন্য নিরাপদ।মনে রাখবেন ফিটকিরি মিশ্রিত পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হয়, কিন্তু ভাইরাস ধ্বংস হয় না। তাই সম্ভব হলে অবশ্যই পানি ফুটিয়ে পান করার চেষ্টা করবেন।

ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম

ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা কোথাও ভ্রমণে গেলে অথবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে জরুরী বিশুদ্ধ পানির জন্য আমরা ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে পারি। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে আমাদের চুলাতে পানি গরম করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তখন আমরা খুব সহজেই ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করতে পারি।

ক্লোরিন ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি পরিষ্কারের জন্য প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি ক্লোরিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে কিছু পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। এগুলো ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করলে পানিতে কিছুটা গন্ধ থেকে যায়। তবে মিশ্রণকৃত পানি পরিষ্কার পাত্রে রেখে পাত্রের মুখ খুলে রাখলে বা কাঠি দিয়ে পানি হালকা নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসের সাথে মিশে যায়। 

পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি

পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি রয়েছে কয়েক প্রকার। পানি বিশুদ্ধকরন পদ্ধতিগুলো আমাদের জন্য জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পানির অপর নাম জীবন আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ লিটার পানি পান করতে হয়। আর দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি। তাই পানি বিশুদ্ধকরন পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নিইঃ

পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করা - পানি বিশুদ্ধ করার সব থেকে কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধকরণ। ফুটিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য পানিকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার থেকে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফুটাতে হবে। ফুটানো পানিতে বিভিন্ন ধরনের জীবণু ও লার্ভাসহ ধ্বংস হয়ে যায়। ফুটানো পানি ঠান্ডা করে ছাকনি দিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে।

সংরক্ষিত পানি প্লাস্টিকের পাত্রে সংগ্রহের থেকে কাচ বা স্টিলের পাত্রে সংরক্ষণ করা সব থেকে ভালো। ফোটানো পানি দুই দিনের বেশি সংরক্ষণ করা উচিত নয়, কারণ বেশিদিন রেখে দিলে ফোটানো পানিতে আবারো জীবাণু আক্রমণ করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

ফিল্টার মেশিনে পানি বিশুদ্ধ করা - ফিল্টার মেশিনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরন এটি অনেক শর্টকাট একটি প্রসেস। চুলাতে পানি গরম করার ক্ষেত্রে সময় ও গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাসের সংকটের জন্য অনেক সময় আমাদের চুলায় পানি ফুটানো ব্যয়বহুল হয়ে যায়। আবার বন্যা কবলিত এলাকায় চুলাতে পানি ফুটানো সম্ভব নয় বা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বিকল্প হিসাবে ফিল্টার মেশিন দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা অনেক নিরাপদ।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার দেখতে পাওয়া যায়। যেগুলোতে পানির জীবাণুর পাশাপাশি দুর্গন্ধও দূর করে থাকে। মূলত দুই ধরনের ফিল্টার আমাদের দেশে দেখা যায় সিরামিক ফিল্টার ও অসমোসিস ফিল্টার। আমাদের দেশে প্রায় বেশিরভাগ মানুষ সিরামিক ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে। সিরামিক ফিল্টারে পানি বিশুদ্ধ করার সময় অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে নিয়মিত ফিল্টারটি পরিষ্কার করা।

আয়োডিন মেশানো - আয়োডিন মেশানোর মাধ্যমেও পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব। ১ লিটার সমপরিমাণ পানিতে ২% আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে, মিশ্রণকৃত পানি কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই কাজটি অবশ্যই অনেক সতর্কতার সাথে করতে হবে। কারণ পানি ও আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে সেই পানি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এর দাম কত

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এর দাম এটি স্থানীয় বাজার, ব্যান্ড এবং প্যাকেজিং এর ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। পানি বিশুদ্ধকরণের অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা জানি। পানি বিশুদ্ধকরণের সব থেকে নিরাপদ প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা পানি ফুটানো বা পানি ফিল্টারিংকে জেনে থাকি। কিন্তু বন্যা বা বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে পানি ফুটানো সম্ভব নয় এমনকি পানি ফিল্টারিং ও অনেক সময় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

তখন আমরা খুব সহজেই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এর মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে পারি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এর দাম স্থানীয় বাজার ব্যান্ড ও প্যাকেজিং এর ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। একটি প্যাকেজে যতগুলো ট্যাবলেট(প্রায় ১০০টি) থাকে তার ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারিত হয় যা সধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিকটস্থ ফার্মেসি বা অনলাইন শপ থেকে সঠিক দামটি জেনে নিতে পারেন। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট কিনতে এখানে ক্লিক করুন ।

পানিবাহিত মারাত্মক ৫টি রোগ সম্পর্কে জেনে রাখুন

পানিবাহিত মারাত্মক ৫টি রোগ সম্পর্কে জেনে রাখুন, পানিবাহিত রোগগুলো হচ্ছে সেই রোগ যেগুলো পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবাহিত হয়। এ ধরনের রোগ গুলো সাধারণত দূষিত পানি পান করা বা দূষিত পানি দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো, যেমন- থালা-বাসন, জামাকাপড় পরিষ্কার করার কারণে বেশি সংক্রমিত হয়। পানি বাহিত মারাত্মক ৫টি রোগ সম্পর্কে চলুন জেনে নিই।

কলেরা - এটি গুরুতর একটি পানি বাহিত মারাত্মক রোগ। যা ভাইব্রিও কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। সাধারণত দূষিত ইনফেকশন যুক্ত পানি পান করার কারণে এই রোগ ছড়ায়। কলেরা রোগের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ তীব্র ডায়রিয়া, বমি হওয়া ও দ্রুত ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি। কলেরা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত কারণ সঠিক চিকিৎসা না হলে কলেরাতে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে।

পানিবাহিত-মারাত্মক-৫টি-রোগ-সম্পর্কে-জেনে-রাখুন

টাইফয়েড - টাইফয়েড এটিও একটি পানি বাহিত রোগ। দূষিত পানি বা খাবার গ্রহণের কারণে টাইফয়েড হয়ে থাকে। টাইফয়েড স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে টাইফয়েড এর মূল কারণ। টাইফয়েডের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ উচ্চজর, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া।

হেপাটাইটিস এ - এটি একটি লিভারের ইনফেকশন জনিত রোগ। "হেপাটাইটিস এ" ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে এ রোগের সংক্রমণ ছড়ায়। এ রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ জন্ডিস, পেট ব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি হওয়া। সাধারণত এটি হালকা হয়ে ছেড়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময় মারাত্মক হয়ে হসপিটাল পর্যন্ত যাওয়া লাগতে পারে।

ডায়রিয়া - ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে ডায়রিয়া আক্রমণ হয়। সাধারণত দূষিত পানির মাধ্যমে রোটাভাইরাস বা ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া সংক্রমণ হয়। ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ গুলো হচ্ছে ঘন ঘন পাতলা মল, পেট ব্যথা, বমি ও কখনও কখনও জ্বর।

এন্টামিবা ডিসেন্টেরিয়া - এটিও একটি মারাত্মক পানিবাহিত রোগ। সাধারণত দূষিত পানি পান করার কারণে এই রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগ সাধারণত Entamoeba histolytica  নমক একটি প্যারাসাইট দ্বারা আক্রান্ত হয়। এন্টামিবা ডিসেন্টেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ রক্তাক্ত ডায়রিয়া, তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি ইত্যাদি।

বিশুদ্ধ পানির উপকারিতা গুলো এখনই জেনে নিন

বিশুদ্ধ পানির উপকারিতা রয়েছে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ। খাবার ছাড়া আমরা বেশ কয়েক দিন বাঁচতে পারলেও বিশুদ্ধ পানি ছাড়া কিন্তু বাঁচতে পারব না। আমাদের শরীরে দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে পানি। আর এজন্যই হয়তো বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। প্রতিনিয়তই আমরা প্রচুর পানি পান করছি।

তীব্র গরমে কাজের ফাঁকে হয়তো সবুজ জার থেকে আমরা পানি নিয়ে পান করছি হয়তোবা জ্যামের ফাঁকে একটি দোকান থেকে কোন প্রতিষ্ঠানের মোরকজাত করা পানির বোতল কিনে নিশ্চিন্তে খেয়ে ফেলছি। আসলেই কি আমরা নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানি পান করছি। নিরাপদ বা বিশুদ্ধ পানি না খাওয়ার কারণে আমাদের যে মারাত্মক রোগ গুলো হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে আমরা ওপরের দিকে জেনেছি। তেমনি আমাদের শরীরে বিশুদ্ধ পানির অনেক উপকারিতা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি ও তোকমা খাওয়ার উপকারিতা

শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ পতঙ্গ গুলো সঠিক ভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বিশুদ্ধ পানি পান করার ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি শরীরের ক্লান্তি দূর করে ও শক্তি ফিরে আসতে সাহায্য করে। বিশুদ্ধ পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। বিশুদ্ধ পানি শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও সরবরাহ করে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতেও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বিশুদ্ধ পানি আমাদের শরীরের হজম ক্রিয়া ঠিক রাখে, হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠোকাঠিন্য দূর করে। বিশুদ্ধ পানি পান করার কারণে আমরা কিডনি পাথর থেকে বাঁচতে পারি। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করার মাধ্যমে আমরা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থেকে শারীরিক শক্তি অর্জন করতে পারি। বিশুদ্ধ পানি শরীরের রক্ত সঞ্চালন থেকে শুরু করে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্ত অঙ্গ পতঙ্গের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

নিরাপদ পানির উৎস কি কি জেনে রাখুন

নিরাপদ পানির উৎস কি কি চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই। নিরাপদ পানির উৎস বলতে সে সকল জায়গাকে বোঝানো হয় যেখানে পানির উচ্চমানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করা যায় এমন জায়গা। নিরাপদ পানির উৎস ভূগর্ভস্থ এবং ভূগর্ভস্থর উপরে সব জায়গাতেই হতে পারে কিন্তু এই উৎস থেকে পাওয়া পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ কিনা তা যাচাই করতে হবে।

নদী - নদী একটি চলমান পানি প্রবাহের ধারা। এই জলধারা সাধারণত পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু হয়ে নিম্নভূমিতে গিয়ে মিশে যায়। সাধারণত আমরা নদীর পানিকে নিরাপদ পানি হিসাবে ধরে নিতে পারি।

নালা - নালা হচ্ছে ছোট আকারের নদী, যেগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়। অবস্থান ভেদে নালা থেকে পাওয়া পানিও আমরা নিরাপদ হিসাবে ধরে নিতে পারি।

জলপ্রপাত - পাহাড়ি অঞ্চলের ঝর্ণা থেকে বা উচ্চ স্থান থেকে পতিত পানি নিরাপদ পানি হতে পারে। তবে তা অনেক সময় মাটি ও পাথরের সাথে মিশে দূষিত হতে পারে।

বৃষ্টির পানি - বৃষ্টির পানিকে আমরা নিরাপদ পানি হিসাবে ধরে নিতে পারি, যদি তা দূষণমুক্ত পরিবেশে পরে।

টিউবওয়েল - আমরা সাধারণত টিউবয়েলের পানিকে নিরাপদ পানি হিসেবে জেনে থাকি। কিন্তু অবশ্যই তা আর্সেনিক ফ্রি টিউবল হতে হবে।

এসব উৎস থেকে পাওয়া পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ নাও হতে পারে। এই উৎস গুলো থেকে পাওয়া পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ করার জন্য অতিরিক্ত কিছু পরিশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। অবশ্যই মনে রাখবেন উৎসগুলো থেকে পাওইয়া পানি কখনোই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয় তা পরিশোধনের প্রয়োজন।

দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত

দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত এটি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হয়ে থাকে। সাধারণভাবে বলা যায় একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ বা মহিলার দৈনিক ৭ থেকে ৮ গ্লাস অর্থাৎ দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। তবে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে তা নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া, শারীরিক শ্রম ও ওজনের ওপর। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত পানি পান করা শরীরের পক্ষে মোটেও উচিত নয়।

দৈনিক-কত-গ্লাস-পানি-পান-করা-উচিত

আবার প্রয়োজনে তুলনাই কম পানি খাওয়ার ফলে আমারা গ্যাস্টিক, কিডনি পাথর সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। তাই আমাদের ওজনের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজন মাফিক পানি খাওয়া উচিত। গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়ার কারণে আমাদের পানির চাহিদা অনেক বেড়ে যায় এবং শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে পানির চাহিদা অনেক কমে যায়। তাই সব সময় শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করা উচিত। যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের বেশি পানি পান করা করতে হবে।

পুকুরের পানি পরিষ্কার করার উপায়

পুকুরের পানি পরিষ্কার করার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করি আমাদের পুকুরের পানি অনেক ঘোলাটে বা পানির উপর দিয়ে ময়লা ছাতার আস্তরণ জমে গেছে। যার ফলে আমাদের পুকুরের মাছগুলো মারা যেতে পারে। তাই আমাদের নিয়মিত পুকুরের পানি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এতে করে পুকুরের পানি পরিষ্কার থাকবে এবং মাছের ফলন ও বৃদ্ধি পাবে চলুন জেনে নিয় পুকুরে পানি পরিষ্কার করার উপায় গুলো।

আরো পড়ুনঃ  ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা

আমাদের পুকুরের উপরের স্তরের ময়লা, পাতার সরিষা বা অন্যান্য ভাসমান যে বস্তুগুলো থাকে সেগুলো নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা উচিত। পুকুরের পানি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু জলজ উদ্ভিদ (যেমন জল লিলি) এ জাতীয় উদ্ভিদ আমাদের পুকুরে রাখা উচিত। উক্ত উদ্ভিদ গুলো পুকুরে পানি পরিষ্কার রাখবে এবং পুকুরের মাছ সেই উদ্ভিদগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। এতে করে যেমন পুকুরের পানি পরিষ্কার হচ্ছে অন্যদিকে মাছের খাদ্যও হচ্ছে।

ড্রেনিং এবং পুনঃভরাটের মাধ্যমে আমরা পুকুরে পানি পরিষ্কার করতে পারি। এ পদ্ধতিতে পুকুরের পানি সম্পূর্ণ বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেওয়ার মাধ্যমে আমরা পুকুরে পানি পরিষ্কার করতে পারি। প্রয়োজন হলে আমরা রাসায়নিক ব্যবহার করার মাধ্যমে পুকুরে পানি পরিষ্কার করতে পারি। কিন্তু অবশ্যই রাসায়নিক ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। অক্সিজেনেশনের মাধ্যমেও পুকুরের পানি পরিষ্কার করা যায়। 

অক্সিজেন পাম ব্যবহার করে পুকুরের পানি পরিষ্কার করা এখন এটি অনেক প্রচলিত একটি বিষয়। বাজারে অনেক ধরনের অক্সিজেন পাম কিনতে পাওয়া যায়। অক্সিজেন পাম্পের মাধ্যমে মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পুকুরের পানি পরিষ্কার করতে পারবেন। অক্সিজেন পাম্প পুকুরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতেও সাহায্য করে যার ফলে পুকুরের পানি গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

লেখকের মন্তব্যঃ  ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম সম্পর্কে

ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম টি জেনে রাখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের অনেক সময় অনেক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে হয়, যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি। তখন আমরা অন্য কোন উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করতে পারি না ফলে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হই যাতে করে আমরা মারাত্মক রোগের সম্মুখীন হই। এমন সময় আমরা ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে সেই পানি পান করতে পারি।

"ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম" আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করার নিয়ম, বিশুদ্ধ পানির উপকারিতা ও পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, লাইফস্টাইল, অনলাইন ইনকাম সহ অন্যান্য ক্যাটাগরির আপডেট আর্টিকেল গুলো পড়তে আমাদের হোম পেজটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।

comment url