কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় ও কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় এ বিষয়ে হয়তো আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। কিসমিস যা শুকনো আঙ্গুর হিসেবে পরিচিত। হ্যাঁ, কিসমিস খেলে আমাদের ত্বক ফর্সা হয়। কারণ কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে।
কিসমিস ভিটামিন মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস। কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের ত্বক সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে পারি, এছাড়াও কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক। কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় ও কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়
- কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন
- কালো কিসমিসের উপকারিতা জেনে নিন
- শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
- কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় জেনে নিন
- কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়
- রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
- প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
- কিসমিস খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন
- কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় ও কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়
কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় চলুন জেনে নেই এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। কিসমিস
বা শুকনো আঙ্গুরে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক
উপকারী। কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ই, যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের কুঁচকানো ভাব কমিয়ে থাকে। কিসমিসের মধ্যে রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের ক্ষতিকর রেডিক্যালস থেকে সুরক্ষা দেয়
এবং ত্বকের তারুণ্য ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ মেলাট্রিন ক্রিম কতদিন ব্যবহার করতে হবে ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিসমিসে উচ্চমাত্রায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি ও ই যা আমাদের
ত্বককে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ত্বকের কোষ পুনর্নির্মাণে সাহায্য করে। এছাড়াও
কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- রেসভারেট্রল ও ক্যাটেচিন, ত্বকের
স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে মুক্ত রেডিক্যালসের ক্ষতি
থেকে রক্ষা করে, এতে আমাদের ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকে। কিসমিস পানির ভালো উৎস
যা আমাদের শরীরের সঠিক হাইড্রেশন নিশ্চিত করে থাকে।
পর্যাপ্ত জলীয় স্তর ত্বকের আদ্রতা ও কোমলতা বজায় রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও কিসমিসের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
কিসমিস শরীরের টক্সিন দূর করতেও সহায়তা করে থাকে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও
উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে অনেক সহায়ক। কিসমিসে থাকা কপার আমাদের ত্বকের সুরক্ষায়
সহায়ক। কপার ত্বককে ইউভি রশ্নির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। নিয়মিত
কিসমিস খেলে তা অবশ্যই আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতায় কাজে আসবে।
কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন
কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত। কিসমিস এটি
দিনে দিনে আমাদের আনন্দদায়ক খাবার হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। আমরা অনেকেই শুধু
শুকনো কিসমিস খেয়ে থাকি। আবার বিভিন্ন মিষ্টান্ন বা সুস্বাদু খাবার তৈরিতে
কিসমিসের জুড়ে মেলা ভার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে শুকনো কিসমিস খাওয়ার থেকে রান্না
করা বা পানিতে ভিজিয়ে রাখা কিসমিস খাওয়াই বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন
জেনে নেই কিসমিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে - ভেজানো কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে।
- আয়রন সমৃদ্ধ - কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা আমাদের আয়রন জনিত রোগ সমূহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
- হৃদরোগের জন্য উপকারী - কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়ামের মতো খনিজ থাকে, যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
-
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে - কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনইয়েড এবং পলিফেনল যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি
কমায় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হাড়ের ক্ষয় রোধ করে - কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে অনেক সহায়ক।
- চুল ও ত্বকের যত্নে - চুল ও ত্বকের যত্নে কিসমিসের উপকারিতা অপারিশীম। কিসমিস নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে চুল পাতলা ও ধূসর হওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর হয় ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে - কিসমসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পেটে ক্ষুধার ভাব কমায় এতে করে খাবার কম খাওয়াই আমাদের বাড়তি ওজন কমে।
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে - কিসমিসে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে।
- ঘুম উন্নত করে - কিসমিসে থাকে মেলাটোনিন নামের উপাদান যা আমাদের ঘুমকে সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে - কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কালো কিসমিসের উপকারিতা জেনে নিন
কালো কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানি না বা ভাবি কালো
কিসমিস কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? হ্যাঁ, কালো কিসমিসও আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কালো আঙ্গুল থেকে তৈরি হওয়া এই কিসমিস আমাদের
হঠাৎ ক্ষুধা নিবারণের জন্য হতে পারে তাৎক্ষণিক একটি সমাধান। এছাড়াও কিসমিসে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
চলুন জেনে নেই কালো কিসমিসের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
আমাদের বাসার বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কালো কিসমিস। কালো
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের
জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কালো কিসমিসে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণ প্রোটিন যা আমাদের হাড় গঠনে এবং হাড় বিকাশে সহায়তা করে থাকে। কালো
কিসমিসে থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করতে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা কালো হয়
কালো কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়, কালো কিসমিসে থাকা ফাইবার আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে
সাহায্য করে এবং আমাদের ত্বকের ব্রণ, মেছতা সহ বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতেও
সাহায্য করে থাকে। আমাদের চুলের সমস্যা সমাধানেও অনেক উপকারে আসে কালো কিসমিস।
কালো কিসমিস খাওয়ার ফলে আমারা চুল পড়া বন্ধ হওয়া, চুল ঘন হওয়া ও চুল কালো
হওয়ার মতো বিভিন্ন উপকারিতা পেয়ে থাকি। কালো কিসমিস আমাদের শরীরের
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে।
আমরা যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগতেছি তাদের জন্য কালো কিসমিস হতে
পারে জাদুকরী একটি উপাদান। এছাড়াও আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খেতে
পারি কালো কিসমিস, কারণ কালো কিসমিসে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড
ও পলিফেনলের যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী। আমাদের ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করার ক্ষেত্রেও কালো কিসমিসের
ভূমিকা অপরিসীম।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় অনেকের হয়তো এই বিষয়টা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। কারণ কিসমিস সাধারণত বিভিন্ন মিষ্টান্ন বা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমরা শুকনো কিসমিস খেতে তেমন একটা অভ্যস্ত নয়। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে, শুকনা কিসমিস খেলে কি হয়? আসলে কিসমিস শুকনো খেলেও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে ভিজিয়ে খেলে কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
শুকনো কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেটের উৎস যা আমাদের শরীরের দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। শুকনো কিসমিসে থাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি, যা আমাদের হঠাৎ ক্ষুধা লাগলে আমরা সেই ক্ষেত্রে শুকনো কিসমিস খেলে তা আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান দিতে সক্ষম। শুকনো কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় এবং অনেকের শুকনো ফলের প্রতি এলার্জি থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত।
কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় জেনে নিন
কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয়, চলুন জেনে নিই কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। আমরা সাধারণত বিভিন্ন খাবার বা মিষ্টান্ন তৈরিতে কিসমিস ব্যবহার করে থাকি। আবার অনেকেই হয়তো আমরা শুকনো কিসমিস খেয়ে থাকি, কিন্তু কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে খেলে সব থেকে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় এবং কিসমিস ভেজানো পানিতেও রয়েছ অনেক উপকারিতা।
কিসমিস এটি সাধারণত আঙ্গুর ফল শুকিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। কিসমিস ভেজানো হলে এর পুষ্টিগুণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। ভেজানো কিসমিস জল শোষণ করে যা আমাদের হজমে অনেক সহায়তা করে সাথে অন্ত্রেরও উন্নতি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। এছাড়াও ভেজানো কিসমিস আমাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের দ্রুত শক্তি প্রদান করে। বিশেষ করে আমরা খেলাধুলা বা যেকোনো কঠোর পরিশ্রমের পূর্বে ভেজানো কিসমিস খেলে এক্সট্রা একটা এনার্জি লাভ করতে পারি।
ভেজানো কিসমিসে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, ফাইবার আমাদের অন্ত্রের জন্য অনেক ভালো এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়তা করে থাকে। ভেজানো কিসমিসে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, মিনারেল ও ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও ভেজানো কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। শুকনো কিসমিস বা কিসমিস রান্না করে খাওয়ার থেকে পানিতে ভিজিয়ে কিসমিস খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ কিসমিস চুল গজানোর উপায়?
উত্তরঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস এবং কিসমিস ভিজিয়ে
রাখা উক্ত পানি পান করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়। নিয়ম করে পরিমাণ মতো কিসমিস খেলে চুল পড়া, নতুন চুল গজানো, চুল কালো
ও ঘন হওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ দিনে কয়টি কিসমিস খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ কিসমিসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর উপকারিতা। কিন্তু অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলেও আমাদের শরীরে দেখা দিতে পারে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ৮ থেকে ১০ টি কিসমিস খাওয়াই আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো।
প্রশ্নঃ কোন কিসমিস সবচেয়ে ভালো?
উত্তরঃ প্রতিটি কিসমিসেই রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর স্বাস্থ্য
উপকারিতা। সাধারণত লক্ষ্য করা যায় সোনালী কিসমিসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং
সোনালি কিসমিস খেতেও অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া কি ক্ষতিকর?
উত্তরঃ আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমাণ মতো কিসমিস খেলে আপনার অনেক
স্বাস্থ্য উপকারিতা দেখতে পাবেন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু
অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খাওয়া হতে পারে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।
প্রশ্নঃ কিসমিসে কি বেশি চিনি থাকে?
উত্তরঃ কিসমিসে থাকে প্রচুর পরিমাণ শর্করা, ক্যালরি এবং
কার্বোহাইড্রেট এবং কিছু পরিমাণ থাকে প্রাকৃতিক চিনি। ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস
খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয় চলুন জেনে নেই এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
আমরা আমাদের কর্মব্যস্ততায় প্রতিদিনই প্রায় স্যান্ডউইস, বার্গার, পিজার মত
বিভিন্ন ফাস্টফুড খেয়ে থাকি। উচ্চমানের এইসব ফ্যাট ও ক্যালরিযুক্ত খাবার
খাওয়ার ফলে আমাদের পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আমরা প্রতিনিয়তই
গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যাই ভুগছি। যারা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন নিয়ে অভ্যস্ত
তাদেরকে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, তারা সকালে খালি পেটে কোন না কোন স্বাস্থ্যকর
পানীয় পান করছে।
আরো পড়ুনঃ মসুর ডাল বাটা মুখে দিলে কি হয়
এই স্বাস্থ্যকর পানীয় গুলোর মধ্যে একটি হতে পারে কিসমিস ভেজানো পানি। আপনি যদি
প্রতিদিন রাত্রে একমুষ্টি পরিমাণ কিসমিস কিছু পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং
সকালে খালি পেটে উক্ত ভেজানো কিসমিস এবং কিসমিস ভেজানো পানি পান করেন। তা আপনার
শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক কিছু সমস্যার সমাধান। চলুন জেনে নেই সকালে
খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার বিশেষ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের গ্যাস্ট্রিক,
কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা সহ অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার উপকারিতা পাওয়া
যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে তা আমাদের হার্ড, লিভার ও কিডনি
ভালো রাখতে অনেক উপকারী। এছাড়াও নিয়মিত কিসমিস খেলে আমাদের রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরে পুষ্টি
উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে।
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় অনেকেই হয়তো এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেনা। কিসমিসে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ, মিনারেল ও ক্যালোরিত ভরপুর যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিসমিস আমরা মূলত বিভিন্ন খাবার বা মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহার করে থাকি, আবার অনেকে শুকনো কিসমিস খেয়ে থাকেন। শুকনো কিসমিস ভিজিয়ে খেলে সব থেকে বেশি কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
আর পানিতে ভিজানো কিসমিস যদি আপনি রাতে ঘুমানোর আগে খান তাহলে পাবেন বেশি কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। রাতে ঘুমানোর আগে আপনি যদি কিসমিস খেয়ে থাকেন তাহলে তা আপনার দৃষ্টিশক্তির জন্য হতে পারে অনেক উপকারী। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী ও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
আরো বেশি উপকারিতার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেতে পারেন। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় মজবুত করতে অনেক সহায়ক। রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে তা আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধে এবং হাড় মজবুত করতে অনেক সহায়ক। অনেকে প্রশ্ন করেন রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয়? হ্যাঁ রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল হয়।
যাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা রাতে কিসমিস খেলে পেতে পারেন মারাত্মক উপকারিতা।কারণ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। রাতে কিসমিস খেয়ে ঘুমালে সকালে উঠেই আমারা ক্ষুধা ভাবটা থেকে বিরত থাকতে পারি, এতে খাবার কম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বাড়তি ওজন কমতেও অনেক কার্যকর। যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিসমিস খাওয়ার কথা না বললেই নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে আপনি যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ১০টি করে কিসমিস খান তাহলে আপনার ঘুম অনেক ভালো হবে। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন এতে আমাদের ঘুম ভালো হয় এবং মানসিক চিন্তা থেকেও বিরত থাকা যায়। এক্ষেত্রেও আপনি দুধের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে তা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এ বিষয়ে আমাদের সঠিক তথ্য জেনে রাখা
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা শুধু উপকারের কথা বিবেচনায় অতিরিক্ত মাত্রায়
কিসমিস খাওয়ার ফলে হতে পারে আমাদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। কিসমিসে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক সুগার, অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে
শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের
ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে পারে।
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট, তাই অতিরিক্ত পরিমাণ কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খাওয়ার ফলে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এলার্জি থেকে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন গ্যাস্ট্রিক পেট ফাঁপা, ফোলা ইত্যাদি।
আমরা জানি যেকোন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী উক্ত খাবারই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের জন্য হতে পারে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। কিসমিস ভিজিয়ে খেলে আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়, এছাড়াও আপনি কিসমিস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
কিসমিস খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন
কিসমিস খেলে কি মোটা হয় এই সম্পর্কে হয়তো অনেকের সঠিক ধারনা নেই। আমরা অনেকে মনে করি কিসমিস খেলে হয়তো আমাদের ওজন বেড়ে যায়, আবার অনেকে মনে করি ওজন কমানোর জন্য কিসমিস খাওয়া উচিত। আসলে মোটা হওয়া বা চিকন হওয়া এই বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার খাদ্য অভ্যাস এবং ডায়েটের উপর। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, মিনারেল, খনিজ এবং ভিটামিন।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের পেটে অনেকক্ষণ খাবারের তৃপ্তি পাওয়া যায়। এতে করে আমাদের ক্ষুধা কম লাগে এবং খাবার কম খাওয়াই আমাদের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকে তাই অনিয়মিত বা বেশি পরিমাণ কিসমিস খাওয়ারার ফলে আপনার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অবশ্যই নিয়ম মেনে এবং ডায়েট প্লানিং অনুযায়ী আমাদের কিসমিস খাওয়া উচিত।
কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়?
উত্তরঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, মিনারেল, খলিজ উপাদান ও
ক্যালোরি যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার
ফলে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে, কারো কারো ক্ষেত্রে কিসমিস খাওয়ার ফলে
এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কিসমিস খেলে কি হয়?
উত্তরঃ প্রতিদিন পরিমাণ মতো কিসমিস খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়।
প্রশ্নঃ খালি পেটে কিসমিস খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ অবশ্যই, খালি পেটে কিসমিস খাওয়া যাবে। রাতে এক মুষ্টি পরিমাণ
কিসমিস পরিমাণ মতো পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খালে অনেক বেশি উপকারিতা
পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ ১টি কিসমিসে কত ক্যালরি থাকে?
উত্তরঃ ১০০ গ্রাম কিসমিসে সাধারণত ২৯০ ক্যালরি থাকে। এখন হিসাব করতে
হবে ১০০ গ্রাম কিসমিসে কয়টি কিসমিস হয়, তাহলেই বের হবে একটি কিসমিস এ
কত ক্যালরি থাকে।
প্রশ্নঃ কিসমিস কত টাকা কেজি?
উত্তরঃ কিসমিস সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়ে
থাকে। এটি বিভিন্ন দেশের কিসমিসের ওপর নির্ভর করে থাকে। আপনি আপনার এলাকার
বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে কিসমিসের সঠিক দাম জানতে পারবেন।
লেখকের মন্তব্যঃ কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় ও কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ ও ক্যালরি যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী সব উপাদান। কিসমিস খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও করতে ভীষণ উপকারী। কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে বেশ কিছু বিশেষ করে এটি আমাদের দেহের শক্তির একটি ভালো উৎস এবং আমাদের কর্ম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে থাকে।
কিসমিস আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে, কিসমিসে রয়েছে
ডি-টক্সিফিকেশন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। কিসমিস নিয়মিত সেবনে আমাদের শরীরে সামগ্রিক সুস্থতা বজায়
রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু অনিয়মিত বা অতিরিক্ত মাত্রায় কিসমিস খেলে
আমাদের শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পার যেমনঃ এলার্জি সমস্যা,
শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।
comment url