মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন সঠিক তথ্য

মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় এই প্রশ্নটি নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত থাকি। কারণ আমরা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করি। যেমনঃ জিমে ঘাম ঝরানো, যোগব্যায়াম, ডায়েটিং প্ল্যান ইত্যাদি। অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করার কোন বিকল্প নেই।

মসুর-ডাল-খেলে-কি-মোটা-হয়

কিন্তু ব্যায়াম করার পাশাপাশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান। যখন ওজন কমানোর জন্য সেরা খাবারের তালিকা করা হয়, তখন মসুর ডালের কথা প্রথমে না বললেই নয়। মসুর ডাল বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। চলুন জেনে নিই প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয়।

পোস্ট সূচীপত্রঃ মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন সঠিক তথ্য

মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন

মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকে চিন্তিত থাকি। কারণ আমরা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের যোগব্যাম বা ডায়েট প্ল্যানিং করে থাকি। কিন্তু শুধুমাত্র ব্যায়াম করায় কি আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট? হ্যাঁ, অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করার কোন বিকল্প নেই, কিন্তু এর সাথে প্রয়োজন আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান।

যখন ওজন কমানোর পুষ্টিকর খাদ্য তালিকার কথা আসে তখন মসুর ডালের কথা প্রথমে না বললেই নয়। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা। মসুর ডালে রয়েছে প্রোটিনের সাথে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেক কার্যকর। যদি ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা তৈরি করা হয় তাহলে প্রথমেই থাকে মসুর ডাল।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা কালো হয়

মসুর ডাল সাধারণত কম ক্যালরিযুক্ত উচ্চ প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। মসুর ডাল আমাদের অনেক সময় ধরে খাবারের তৃপ্তি দেয় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। এতে করে আমাদের তেমন ক্ষুধা পায় না ফলে আমরা খাবার কম খায়। আর খাবার কম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

মসুর ডালের উচ্চ ফাইবার থাকায় হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। তাই সঠিক পরিমাণ মসুর ডাল খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে এটি মোটেও মোটার কারণ হতে পারে না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। তবে অত্যাধিক পরিমাণ মসুর ডাল বা অন্যান্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে মসুর ডাল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ওজন বৃদ্ধিতে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয়

প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি হয় এটা নিয়ে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। কারন আমাদের অনেকের বাসায় প্রায় দিনই মসুর ডাল রান্না করা হয়। এখন এই মসুর ডাল খাওয়া নিয়ে হয়তো আমরা অনেকেই এমন প্রশ্ন ভেবে থাকি, মসুর ডাল প্রতিদিন খেলে কি হয়? আসলে মসুর ডাল একটি পুষ্টিকর খাবার, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন দিক থেকে উপকারে আসে। এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের শরীরে প্রোটিন মাংসপেশী গঠনে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে মসুর ডালে। মসুর ডাল ফাইবার সমৃদ্ধ যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। মসুর ডালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে এটি ধীরে ধীরে শর্করা ছাড়াই এবং রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখে, যা আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। মসুর ডালে রয়েছে ভিটামিন বি, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাশিয়াম।

যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়ক। তাছাড়াও মসুর ডালে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি শরীরের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে পারেন বা এত উপকারিতার জন্য শুধুমাত্র মসুর ডালের উপর নির্ভরশীল হলেও তা আপনার শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য অবশ্যই মসুর ডাল সহ একটি সুষম খাদ্য তালিকা মেইনটেইন করা উচিত।

মসুর ডাল খেলে কি গ্যাস হয়

মসুর ডাল খেলে কি গ্যাস হয় এটি প্রায়ই আমাদের সকলের একটি কমন প্রশ্ন, কারণ আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই প্রায় সকলেই ভুগি। বিভিন্ন খাবার অনিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। মসুর ডাল একটি পুষ্টিকর এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, তবে এটি কিছু মানুষের  গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মসুর ডালে অনেক ধরনের শর্করা উপাদান থাকে যেমন ফাইটোনিউট্রিইয়েন্টস এবং রাফিনোজ।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত

যা আমাদের পাচক তন্ত্রে পৌঁছে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙ্গে যায়, এই প্রক্রিয়ার ফলে গ্যাস এবং পেট ফাঁপা হতে পারে। এছাড়াও মসুর ডালে রয়েছে উচ্চ আশেঁর পরিমাণ এতে করে অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়ায় গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে যদি হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিমাণ মসুর ডাল খাওয়া হয় তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ কোন খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া উচিত নয় তাহলে তা উপকারের থেকে অপকারিতা সম্ভাবনায় বেশি।

অধিক পরিমাণ আর হঠাৎ করে কোন খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় আমাদের একদমই খাওয়া উচিত নয়। সঠিকভাবে রান্না করে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যা কিছুটা কমানো যায়। অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা বা ফোলার সম্মুখীন হতে পারেন। মুসুর ডাল খাওয়ার কারণে যদি গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়, তাহলে ডালের পরিমাণ কমিয়ে আবার ধীরে ধীরে বাড়ানো যেতে পারে।

মসুর ডাল খেলে কি এলার্জি হয় জেনে নিন

মসুর ডাল খেলে কি এলার্জি হয় এ প্রশ্নের উত্তর হলো হ্যাঁ, আমাদের প্রায় সকলের শরীরে কম বেশি এলার্জি রয়েছে। এটি আমাদের খাদ্য গ্রহণের সাথে সংমিশ্রণে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে। মসুর ডাল খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। মসুর ডাল সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। তবে কিছু মানুষের মসুর ডাল খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

মসুর ডালের প্রোটিন বা অন্যান্য উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে এলার্জির লক্ষণ যেমন- চুলকানি, লালচে ভাব, পেটব্যথা বা নিঃশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়া সাধারণত জিনগত বা ব্যক্তিগত হয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে এলার্জি সমস্যা গুরুতর হতে পারে। তাই যদি কারো মসুর ডাল খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে তার মসুর ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

মসুর ডাল বেশি খেলে কি রোগ হয়

মসুর ডাল বেশি খেলে কি রোগ হয় এটি নিয়ে হয়তোবা আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে মসুর ডাল হচ্ছে একটি পুষ্টিকর খাবার, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিছু ক্ষেত্রে এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, প্রোটিন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং অত্যাবসকীয় উপাদান।

মসুর-ডাল-বেশি-খেলে-কি-রোগ-হয়

তবে মসুর ডাল অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে তা আমাদের হজম জনিত সমস্যা যেমন- গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং অন্ত্রের অস্বস্তি সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও মসুর ডালে উপস্থিত কিছু অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট যেমন- ফিটিক অ্যাসিড এবং লোক্টিন, যা অতিরিক্ত পরিমাণে মসুর ডাল খাওয়ার ফলে খাদ্য শোষণের ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের মসুর ডাল খাওয়ার ফলে কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মসুর ডালে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ফসফরাস যা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে তাই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য মসুর ডাল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। মসুর ডাল সুষম ভাবে এবং পরিমিত পরিমানে খাওয়া হলে তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় বা অনিয়মিত খাওয়ার ফলে তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

মসুর ডাল সম্পর্কে সচারচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ রাতে মসুর ডাল খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর পূর্বে হালকা ও সহজে হজম যোগ্য খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মসুর ডাল আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে তাই রাতে মসুর ডাল খাওয়া যাবে।

প্রশ্নঃ বেশি মসুর ডাল খাওয়া কি ক্ষতিকর?

উত্তরঃ মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের অন্ত্রের হজম প্রক্রিয়ার জন্য কিছুটা কঠিন। এছাড়াও অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক, কিডনি ও এলার্জি সহ বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই বেশি মসুর ডাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

প্রশ্নঃ দিনে কতটুকু মসুর ডাল খাওয়া যাবে?

উত্তরঃ মসুর ডালে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। মসুর ডাল পরিমাণ মতো খাওয়ার ফলে তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে, কিন্তু অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ। প্রতিদিন আমরা ১/৩ কাপ (৬০ গ্রাম) মসুর ডাল খেলে তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়?

উত্তরঃ মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য প্রোটিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও মসুর ডালে কম ফ্যাট এবং কম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে থাকে। তাই বলা যায় প্রতিদিন নিয়ম মেনে মসুর ডাল খেলে আপনি মোটা নয় বরং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।

প্রশ্নঃ ডাল বেশি খেলে কি ওজন বাড়ে?

উত্তরঃ ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজির একটি ইনফরমেশন অনুসারে ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের দ্রুত ওজন কমাতে পারে। অর্থাৎ (ডাল ফর ওয়েট লস) ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

মসুর ডালে কত ক্যালরি থাকে জেনে নিন

মসুর ডালে কত ক্যালরি চলুন জেনে নেই, মসুর ডাল যা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি জনপ্রিয় তরকারি হিসেবে পরিচিত। আমাদের বাড়িতে বা হোটেলে প্রায় সময় মসুর ডাল রান্না হয়। আমাদের নিত্যদিনের তরকারিতে মসুর ডাল অনেক জনপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে প্রায় ৩৫২ ক্যালোরি থাকে এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট

বিশেষ করে মসুর ডাল আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আমাদের হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে। মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়? মসুর ডালে থাকা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের তৃপ্তি বজায় রাখে। ফলে আমাদের ক্ষুধা কম লাগে এবং খাবার কম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে।

মসুর ডালের পুষ্টিগুণ জেনে নিন

মসুর ডালের পুষ্টিগুন অপরিসীম। মসুর ডাল যা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান একটি খাদ্য, যা এখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেও বহুল প্রচলিত খাদ্য। মসুর ডালের ইংরেজি নাম হচ্ছে Red Lentil । মসুর ডালকে সাধারণত পানির সাথে সিদ্ধ করে তেল ও মশলার সহযোগে রান্না করে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। মানবদেহে আমিষের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে মসুর ডালকে সাধারণত গরিবের মাংস বলা হয়। মসুর ডাল দেখতে সাধারণত লাল বর্ণের হয়ে থাকে।

চলুন জেনে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালের পুষ্টিগুণ-

ক্রমিক নং পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
০১ জলীয় অংশ ১২.৪ গ্রাম
০২ খনিজ পদার্থ ২.১ গ্রাম
০৩ খাদ্যা আঁশ ০.৭ গ্রাম
০৪ খাদ্য শক্তি ৩৪৩ কিলো ক্যালরি
০৫ আমিষ ২৫.১ গ্রাম
০৬ চর্বি ০.৭ গ্রাম
০৭ ক্যালসিয়াম ৬৯.০ মিলিগ্রাম
০৮ লৌহ ৪.৮ মিলিগ্রাম
০৯ ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম
১০ ভিটামিন বি-২ ০.৪৯ মিলিগ্রাম
১১ শর্করা ৫৯.০ গ্রাম

মসুরের ডাল বাটা মুখে দিলে কি হয়

মসুর ডাল বাটা মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে হয়তো আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। মসুর ডাল খাওয়ার ফলে যেমন আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়। তেমনি মসুর ডাল বেটে প্যাক তৈরি করে আমাদের মুখে ব্যবহারের মাধ্যমে, আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল করতে পারি। মসুর ডালের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে প্রয়োজন মতো প্যাক তৈরি করে তা ব্যবহার করা যায়।

মসুর-ডাল-বাটা-মুখে-দিলে-কি-হয়

চলুন জেনে নেই মসুর ডালের সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ফেসিয়াল প্যাক তৈরির মাধ্যম-

  • রোদেপোড়া ভাব কমাতে বা বয়সের ছাপ কমাতে মসুর ডালের সঙ্গে শুকনো ফলের গুঁড়ো যেমন- আখরোটের গুড়া বা বেসন মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য মসুর ডালের পেস্ট এর সাথে দুধ মিশিয়ে ত্বকে হালকা মালিশ করে শুকানোর পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর যেকোন ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
  • যাদের ত্বক অনেক শুষ্ক তারা মসুর ডালের গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে হালকা মালিশ করে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে অনেক উপকার পাবেন।
  • মুখে ব্রণের দাগ কমাতে বা ব্রণ প্রতিরোধে মসুর ডালের গুড়ার সঙ্গে ভেজানো মোটরের ডাল, কাঠবাদামের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করলে তা অনেক কাজে আসবে।
  • যাদের ত্বক অনেক তৈলাক্ত ভাব রয়েছে তারা মসুর ডালের ফেসপ্যাক এর সাথে কিছু পরিমাণ ভিনেগার ও টক দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে, তা ত্বকে হালকা করে ত্বকে মালিশ করুন শুকানো পর্যন্ত। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এভাবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারবেন।

মসুর ডাল সম্পর্কে সচারচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ মসুরের কেক কি ভালো?

উত্তরঃ মসুরের ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও আইরন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শিশুদের জন্য মসুর ডালের কেক একটি নিখুত ডেজার্ট তৈরি করে কারণ এটি মিষ্টি, স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর।

প্রশ্নঃ মসুর ডাল খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে?

উত্তরঃ মসুর ডাল খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে না বরং মসুর ডাল খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখে।

প্রশ্নঃ ডায়েটে কি মসুর ডাল খাওয়া যায়?

উত্তরঃ মসুর ডাল আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেক উপকারে আসে। মসুর ডাল খাওয়ার ফলে আমাদের খাবারের তৃপ্তি অনেকক্ষণ ধরে থাকে, এতে করে আমাদের ক্ষুধা কম লাগে এবং খাবার কম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে। তাই বলা যায় ডায়েটে মসুর ডাল অবশ্যই রাখা উচিত।

প্রশ্নঃ রাতে ডাল খেলে কি হয়?

উত্তরঃ রাতে অবশ্যই হালকা এবং সহজে হজমকৃত খাদ্য খাওয়া উচিত। আর ডাল হচ্ছে আমাদের পাকস্থলির হজম শক্তিকে অনেক বৃদ্ধি করে। তাই রাতে ডাল খেয়ে ঘুমালে আমাদের পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকবে।

প্রশ্নঃ চটপটি খেলে কি ওজন বাড়ে?

উত্তরঃ চটপটি খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় না। চটপটিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় চটপটি খাওয়ার ফলে তা আমাদের শরীরে সাধারণত ডায়রিয়া সহ কিডনি ও লিভার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোন ডালে কত ক্যালরি জেনে নিন

কোন ডালে কত ক্যালরি এটা হয়তো আমরা অনেকেই সঠিক ভাবে জানি না। চলুন জেনে নেই কোন ডালে কত ক্যালরি। ডাল হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের খাবার তালিকার অন্যতম একটি প্রধান খাদ্য। আমরা বাঙালিরা ডাল ছাড়া খাবার খেতে তেমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না। অনেকের তো ডাল ছাড়া খাবারে তৃপ্তির ঢেকরই ওঠে না। ডালের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকম প্রকার যেমন- মসুর ডাল, মাসকলাই ডাল, মুগ ডাল, খেসারী ডাল, ছোলার ডাল ইত্যাদি।

চলুন জেনে নিই প্রতিটি ডালের প্রতি ১০০ গ্রামের পুষ্টি উপাদান-

পুষ্টি উপাদান মসুর ডাল মাসকলাই ডাল মুগ ডাল খেসারি ডাল ছোলার ডাল
ক্যালরি ৩৪৩ গ্রাম ৩৪১ গ্রাম - ৩২৭ গ্রাম ৩৬০ গ্রাম
ফ্যাট ১.৫ গ্রাম - - - ৫ গ্রাম
সোডিয়াম ১৭ গ্রাম ৩৮ মি.গ্রা. - - -
পটাশিয়াম ১৩৯২ গ্রাম ৯৮৩ মি.গ্রা. - - -
কার্বোহাইড্রেট ৬৩ গ্রাম - ৬৩ গ্রাম - -
প্রোটিন ২২ গ্রাম ২৫ গ্রাম ২৪ গ্রাম - -
ক্যালসিয়াম ১৩ গ্রাম ১৩৮ মি.গ্রা. ১৩২ গ্রাম. ৯০ মি.গ্রা. ২০০ মি.গ্রা.
ম্যাগনেসিয়াম ৪৫ গ্রাম - ১৮৯ গ্রাম - -
ফাইবার ১৫ গ্রাম - - - -
আয়রণ - ৭.৫৭ মি.গ্রা. ৬.৭৪ গ্রাম ০.৭ গ্রাম -

লেখকের মন্তব্যঃ মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন সঠিক তথ্য

মসুর ডাল আমাদের বাঙ্গালীদের নিত্যদিনের প্রধান খাদ্য হিসেবে ধরা যায়। কারন আমরা বাঙালিদের ডাল ছাড়া যেন আমাদের খাবারের তৃপ্তির ঢেকুর ওঠেনা। আমাদের বাসায় বা হোটেলে নিত্যদিনই আমরা মসুর ডাল খেয়ে থাকি। এই মসুর ডাল আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য বহুল পরিচিত। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা আমাদের শরীরের পেশি গঠনে অনেক সহায়তা করে থাকে।

এছাড়াও মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এছাড়াও মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সকল উপাদান। আবার অতিরিক্ত মাত্রায় মসুর ডাল খাওয়াও কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে মসুর ডাল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক বা এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।

comment url