মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকে অবগত নয়। শুধু
চুলের যত্নে নয়, মুখের জন্যও রয়েছে অলিভ অয়েল তেলের নানা
উপকারিতা। রূপচর্চায় আদর্শ মনে করা হয় অলিভ অয়েল তেলকে কারণ এই তেলে
রয়েছে ত্বকের নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।
অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও বিভিন্ন
ভিটামিন। যা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই চলুন বিস্তারিত জেনে নেই মুখে অলিভ অয়েল
ব্যবহারের উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম ও ১৫টি উপকারিতা
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই সঠিকভাবে না জানার কারণে
হয়তো অলিভ অয়েলের তেমন কোন উপকারিতা দেখতে পায় না। ত্বকের যত্নে বা ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে জাদুকরি উপাদান হিসাবে কাজ করে অলিভ অয়েল। সঠিক নিয়ম মেনে
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারে আমাদের ত্বকের মেছতা, ব্রণ দাগ সহ বিভিন্ন কালো দাগ দূর
করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
চলুন জেনে নেই মুখে
অলিভ অয়েল ব্যবহারের সঠিক কিছু নিয়ম সম্পর্কে-
চোখের নিচের কালো দাগ, দাগ সার্কেল বা রোদে পোড়া ভাব কমাতে উপকার করে অলিভ
অয়েল। কিছু পরিমাণ অলিভ অয়েল তেল উক্ত স্থানে মালিশ করলে এর
উপকারিতা পাওয়া যায়।
ত্বকের গ্লো ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ত্বক উজ্জল রাখতে অলিভ অয়েল এর সাথে কিছু
পরিমাণ গোলাপজল যোগ করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের গ্লো ফিরে
আসবে এবং আপনার আশেপাশে সুগন্ধ ছড়িয়ে যাবে।
এক চামচ অলিভ অয়েল তেলের সাথে এক চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে ১০ সেকেন্ডের মতো
গরম করে তা ত্বকে লাগালে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে ত্বকে লাগানোর
কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
দ্রুত মুখের দাগ, ছোপ কমানোর জন্য দুই চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল তেলের সাথে এক
চামচ পরিমাণ আমন্ড পাউডার এবং এক চামচ পরিমাণ ব্রাউন সুগার মিশিয়ে ভালোভাবে
পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগাতে পারেন। উক্ত পেস্ট মুখে লাগানোর দশ মিনিট পর
পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের ব্রণ দাগ, মেছতা দাগ বা ত্বকের বয়সের ছাপ কমানোর জন্য এক চামচ পরিমাণ
অলিভ অয়েল তেলের সঙ্গে হাফ চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন।
ব্যবহারের পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এতে
ভালো ফলাফল পাবেন।
গোসলের পর পুরো ত্বকে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে সহজেই ত্বক অলিভ
অয়েল তেলের পুষ্টিগুণ শুষে নিবে এবং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
মুখের গ্লো ফিরিয়ে নিয়ে আসতে এবং অলিভ অয়েলের সঠিক উপকারিতার জন্য প্রতিদিন
রাতে ঘুমানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করে অলিভ অয়েল তেল লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন।
এতে আমাদের ত্বকের গ্লো ফিরে আসতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ
ভূমিকা পালন করবে।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই অবগত নয়।
প্রাকৃতিক উপাদান জলপাই থেকে তৈরি হওয়া এই অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য
উজ্জ্বলতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অলিভ অয়েল রান্নার পাশাপাশি ত্বকে
ব্যবহারে আমাদের ত্বকের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান
করে। মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারে কেনই বা এত উপকারিতা পাওয়া যায় বা মুখে
অলিভ অয়েল ব্যবহারে কি কি এমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে চলুন জেনে নেই।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-
হাইড্রেশন - অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকে গভীরভাবে হাইড্রেট করে
এবং ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে ত্বকের ময়শ্চারইজেশন লেভেল বাড়ায়।
ময়শ্চারইজেশন - ত্বকের ময়শ্চারইজেশন এর জন্য অলিভ অয়েল অন্যতম
প্রধান একটি উৎস। অলিভ অয়েলে থাকা প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট যা ত্বকের ভেতর
থেকে হাইড্রেট রেখে ত্বকের শুষ্কতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এন্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য - অলিভ অয়েলে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট
বৈশিষ্ট্য। এতে ভিটামিন ই এবং পলিফেনল এর মত এন্টি-অক্সিডেন্ট
আছে যা আমাদের ত্বকে ক্ষতিকারক রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। আমাদের
ত্বকের কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রদাহ কমানো - অলিভ অয়েলে রয়েছে বিভিন্ন প্রদাহ রোধী গুণাগুণ।
যা আমাদের ত্বকের লাল ভাব, এলার্জির উপসর্গ এমনকি ত্বকের চর্মরোগ কমাতেও
সহায়তা করে থাকে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য - অলিভ অয়েলে রয়েছে
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা আমাদের ত্বককে ইনফ্ল্যামেটরি
বৈশিষ্ট্য প্রমোশিত করে এবং ত্বকের একজিমা, সোয়াসিস এর মতো বিভিন্ন
চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্লিয়ারিং এবং এক্সফোলিয়েশন - অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকে থাকা
ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের ত্বক সতেজ এবং উজ্জ্বল
হয়ে ওঠে।
মুখের দাগ কমানো - আমাদের ত্বকে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারের
মাধ্যমে ত্বকের বিভিন্ন দাগ সার্কেল কমানো সম্ভব। যা আমাদের ত্বকের মসৃণতা এবং
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
মেকআপ রিমুভার - অলিভ অয়েল প্রাকৃতিকভাবে আমাদের
ত্বকের মেকআপ রিমুভার হিসাবে কাজ করে এবং ত্বকের মৃদু ভাব পরিষ্কার
করে।
রোদে পোড়া ভাব দূরীকরণ - রোদে পোড়া ভাব দূরীকরণে অলিভ অয়েল অনেক
গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। অনেকক্ষণ রোদে থাকার কারণে আমাদের ত্বকে লালচে ভাব
বা বিভিন্ন ধরনের এলার্জি উপশম দেখা দেয়। যা দূরীকরণে অলিভ অয়েল হতে
পারে একটি কার্যকারী সমাধান।
রিঙ্কেল এবং ফাইন লাইনের বিরুদ্ধে - অলিভ অয়েল নিয়মিত
ব্যবহারে এটি আমাদের ত্বকের রিঙ্কেল এবং ফাইন লাইন কমাতে সাহায্য
করে। যার ফলে আমাদের ত্বক তরুণ্য এবং স্বাস্থকর হয়ে ওঠে।
ব্রণ উপশম - ত্বকের একটি সাধারণ রোগ বা অসুবিধা হল ব্রণ। নিয়মিত
অলিভ অয়েল ব্যবহারে ব্রণ উপশমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
দাগ দূরীকরণ - আমাদের ত্বক থেকে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ বা চর্ম
রোগের কারণে হওয়া কালো দাগ দূরীকরণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে অলিভ অয়েল।
কিউটিক্যাল এর যত্নে - কিউটিক্যাল এর যত্নে অলিভ অয়েল একটি অন্যতম
উপাদান। যা আমাদের ত্বক শুষ্ক ফাটা কিউটিকল দূর করতে সাহায্য করে।
এক্সফোলিয়েশন - ত্বকের এক্সফোলিয়েশন এর জন্য অলিভ অয়েল
একটি অন্যতম উপাদান।যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ত্বকের ডেড সেল বা মৃতকোষ দুর করে
আমাদের ত্বককে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুরক্ষা - আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে অলিভ
অয়েল একটি কার্যকারী উপাদান হিসেবে ধরা হয়। অলিভ অয়েল নিয়মিত
ব্যবহারে আমাদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
রূপচর্চায় অলিভ অয়েল এর ব্যবহার
রূপচর্চায় অলিভ অয়েল হতে পারে একটি ঘরোয়া সমাধান। আমরা হয়তো সপ্তাহ জুড়ে
বিভিন্ন কাজের চাপে নিজেকে দেওয়ার মতো তেমন সময় বের করতে পারি না। রাশি
রাশি কাজের চাপে আমাদের ত্বকের যত্নেও তেমন একটা সময় না দেওয়ার কারণে, অনেক
সময় আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের দাগ, ছোপ বা ব্রণের মত সমস্যা তৈরি হয়।
রূপচর্চায় সকল সমস্যার সমাধানের কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে এক বোতল
অলিভ অয়েল তেল।
চোখের নিচের কালো দাগ দূরীকরণে আমরা অলিভ অয়েল তেল নিয়ে চোখের নিচের নরম
অংশে আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে মেসেজ করতে পারি, এতে আমাদের চোখের নিচের কালো
দাগ দূর হবে। ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ মধু
মিশিয়ে আমাদের শরীরে মালিশ করলে, তা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
আমাদের বাসায় হঠাৎ করে ফেসওয়াশ শেষ হয়ে গেলে চিন্তায় কোনো কারণ নেই। আমরা
কিছু পরিমাণ অলিভ অয়েল মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ
ধুয়ে ফেললে ফেসওয়াশ ব্যবহারের মত আমাদের মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের
অনেকের গ্রীষ্মকালীন সময়ে বা বিভিন্ন সময়ে ঠোঁটফাটা সমস্যা দেখা
দেয় এতে আমরা অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই বা বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল
ব্যবহার করি।
ঠোঁটফাটা সমস্যা সমাধানে আমরা ঘরোয়া ভাবে কিছু পরিমাণ অলিভ অয়েল এবং তার অর্ধেক
পরিমাণ মধু এবং নারকেল তেল মিশিয়ে, রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে ব্যবহার করলে আমাদের
ঠোঁট তুলতুলে ও নরম হয়ে উঠবে। ত্বকের স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে গোসলের আগে
পুরো শরীরে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে অলিভ
অয়েলের সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ১৫ মিনিট মতো ম্যাসাজ করুন এবং
পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই সঠিক তথ্য
জানিনা। রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে ঘুমালে আমাদের ত্বকের জন্য অনেক
উপকারিতা পাওয়া যায়। ত্বকের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আমরা রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহার
করতে পারি। এখন আমাদের জানতে হবে মুখে অলিভ অয়েল রাতে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
রাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের জন্য প্রথমে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে
এক্ষেত্রে আপনি যে কোন ব্যান্ডের ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। মুখ ভালোভাবে
পরিষ্কার করে ধোয়ার পরে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলতে হবে, যাতে করে মুখে
পানি লেগে না থাকে। এরপর কিছু পরিমাণ অলিভ অয়েল তেল মুখে মেসেজ করতে
হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে
হবে।
রাতে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে আমাদের ত্বক থাকবে নরম ও কোমল। নাইট
ক্রিম এর বিকল্প হিসেবে রাতে ঘুমানোর আগে আমরা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে
পারি। এতে করে আমাদের ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর হবে এবং আমাদের ত্বক থাকবে
স্বাস্থ্য উজ্জ্বল। ব্রণ দাগ, মেছতা দাগ সহ ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর
করতে রাতে অলিভ অয়েল তেলের সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস যোগ করে ব্যবহার করতে
পারেন।
ত্বকের জন্য কোন অলিভ অয়েল ভালো
ত্বকের জন্য কোন অলিভ অয়েল ভালো এই প্রশ্ন নিয়ে আমরা অনেক সময় নানা দ্বিধায়
ভুগি। অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের
ত্বকের স্বাস্থ্য উজ্জ্বলতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পোস্টটি পড়ার
মাধ্যমে আমরা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছি অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা গুলো
সম্পর্কে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো ত্বকের জন্য কোন অলিভ অয়েল ভালো? এ প্রশ্নের
উত্তর জানার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে অলিভ অয়েল তেল কত প্রকার।
চলুন জেনে নেই অলিভ অয়েল তেল কত প্রকার ও কি কি -
এক্সটা ভার্জিন অলিভ অয়েল - জলপাই থেকে সরাসরি আমরা যে তেল পাই সেটি
হচ্ছে এক্সটা ভার্জিন অলিভ অয়েল। এই তেলে কখনো বাড়তি গন্ধ বা স্বাদ যুক্ত
করা হয় না। এ তেল দেখতে হালকা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে।
ভার্জিন অলিভ অয়েল - এক্সটা ভার্জিন অলিভ অয়েলের সব গুনাগুন
এখানে থাকে। কিন্তু এই ভার্জিন অলিভ অয়েলে অ্যাসিডের মাত্রা কিছুটা বেড়ে
যায়, এই তেল দেখতে হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
রিফাইন্ড অলিভ অয়েল - রিফাইন করার কারণে এই অলিভ অয়েলে আঠালো
ভাবটা কিছুটা কম থাকে। অনেক সময় রিফাইন্ড অলিভ অয়েলের সাথে ভার্জিন অলিভ
অয়েলও যুক্ত করা হয়। রিফাইন্ড অলিভ অয়েল এ সাধারণত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর
পরিমাণ কম থাকে এবং দেখতে গাড় হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
ক্লাসিক অলিভ অয়েল - এই অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ভালো
কাজ করে। এই অলিভ অয়েল এ জলপাইয়ের গুড়ো দেখতে পাওয়া যায়, রান্নার
কাজে এটি অনেক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই অলিভ অয়েল দেখতে গাড় সবুজ বর্ণের হয়ে
থাকে।
বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানা যায় রোমান এবং গ্রিকদের সময় থেকে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত
হয়ে আসছে এবং এখন পর্যন্ত মানুষ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য অলিভ অয়েল
ব্যবহার করে আসছে। অলিভ অয়েলে রয়েছে আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা ত্বকের
জন্য অলিভ অয়েল হতে পারে একটি জাদুকরী উপাদান। তবে ত্বকের জন্য কোন অলিভ
অয়েল ভালো, এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের থেকে সবসময় উত্তর এসেছে
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের জন্য সবথেকে ভালো।
অলিভ অয়েল সম্পর্কে সচারচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করলে কি ব্রণ হয়?
উত্তরঃ অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করলে ব্রণ হয় না। আমাদের ত্বকের
স্বাস্থ্য উজ্জ্বলতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে অলিভ অয়েল। তবে আপনার ত্বকের ধরনের
উপর নির্ভর করে অলিভ অয়েলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন মুখে অলিভ অয়েল লাগালে কি হয়?
উত্তরঃ অলিভ অয়েলের রয়েছে ভিটামিন ই এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য
যা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন মুখে অলিভ অয়েল
ব্যবহারে এটি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য উজ্জ্বলতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
প্রশ্নঃ অলিভ অয়েল কি কালো দাগ দূর করে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, প্রতিদিন নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে আপনার ত্বকের
কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বেশি কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে অলিভ অয়েল।
প্রশ্নঃ মুখ সাদা করার জন্য অলিভ অয়েল কিভাবে ব্যবহার করবেন?
উত্তরঃ ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস
মিশিয়ে, মুখে ভালোভাবে ম্যাসাজ করার ৩০ মিনিট পর পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেললে এটি মুখ সাদা করার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
প্রশ্নঃ গোসলের পানিতে কি অলিভ অয়েল দেওয়া যাবে?
উত্তরঃ জি, আপনি চাইলে গোসলের পানিতে কয়েক টেবিল চামচ পরিমাণ
অলিভ অয়েল যুক্ত করে গোসল করতে পারেন। এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায় সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই। আমরা জানি অলিভ
অয়েল তেলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এত এত স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা শুনে
আমরা হয়তো অনেকেই অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা কি আসল অলিভ
অয়েল তেল ব্যবহার করছি? আমরা নামমাত্রই অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারে তেমন কোনো
স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবো না। এজন্য অবশ্যই আমাদের আসল অলিভ অয়েল যাচাই করে কিনতে
হবে।
বাজার থেকে আসল অলিভ অয়েল তেল কেনার জন্য বোতল জাতকৃত অলিভ অয়েল এর
মেয়াদকাল চেক করে নিতে পারেন। সাধারণত আসল অলিভ অয়েল তেলের মেয়াদ দুই
বছরের বেশি দেওয়া থাকে, যদিও কোম্পানিগুলো ১৮ মাস পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য
নির্দেশনা দিয়ে থাকে। অলিভ অয়েল তেল কখনো প্লাস্টিক বা টিনের কৌটায়
উৎপাদন করা হয় না, অলিভ অয়েল তেল সবসময় কাঁচের বোতলে বাজারজাত করন করা হয় এ
বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।
আসল অলিভ অয়েল তেলের ঘনত্ব অন্যান্য তেলের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়ে
থাকে। অলিভ অয়েল তেলটি রোদে থাকার কারণে যদি এর ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়
তাহলে বুঝে নেবেন এটি আসল অলিভ অয়েল নয়। এছাড়াও আপনি বাসায় ফ্রিজ
টেস্টের মাধ্যমে আসল অলিভ অয়েল চিনতে পারবেন।একটি পাত্রে অলিভ অয়েল তেল ডিপ
ফ্রিজে দুই ঘণ্টার মতো রেখে দিলে, তেলটি যদি একদম জমে যায় বা একদম তরল থাকে
তাহলে বুঝবেন এটি আসল অলিভ অয়েল নয়। আর তেলটি যদি হালকা ঘন হয় তাহলে বুঝবেন এটি
আসল অলিভ অয়েল।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের অপকারিতা
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের অপকারিতা সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই অবগত নয়। অলিভ
অয়েল যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা গুণাগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান। সঠিক
নিয়ম মেনে অলিভ অয়েল ব্যবহারে আমাদের মুখের বিভিন্ন দাগ সার্কেল
দূরীকরণের পাশাপাশি মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে
এই অলিভ অয়েলের রয়েছে কিছু অপকারিতা, বিশেষ করে গ্রীষ্ম ঋতুতে এর কিছু
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
অলিভ অয়েল যাতে রয়েছে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুনাগুন সমৃদ্ধ। যা
আমাদের ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর করণে
এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু শুধু
উপকারীতার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত মাত্রায় অলিভ অয়েল ব্যবহারে আমাদের কিছু
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অলিভ অয়েলের উপকারিতার পাশাপাশি
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এলার্জি বা চুলকানির মতো
সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।অনেকের ক্ষেত্রে এই চুলকানি অনেক লালচেভাব বা
শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মুখে অতিরিক্ত অলিভ অয়েল তেল
লাগানোর ফলে ত্বকের পোর বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা আমাদের মুখে ব্রণ সৃষ্টির কারণ
হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহারে মুখে তৈলাক্ত ভাব
বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মেছতা দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
অলিভ অয়েল সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ গোসলের আগে অলিভ অয়েল দিলে কি হয়?
উত্তরঃ গোসলের আগে অলিভ অয়েল তেল শরীরে ম্যাসাজ করে নিলে আমাদের
ত্বকের জৌলুশ বজায় রাখতে এবং আমাদের শরীর সতেজ ও কোমল রাখতে সাহায্য
করে।
প্রশ্নঃ অলিভ অয়েল তেল কি মুখে ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল তেলের রয়েছে নানা
উপকারিতা। অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল আমাদের মুখে বয়সে ছাপ কমাতেও
বিশেষ কার্যকারী।
প্রশ্নঃ অলিভ অয়েল কি মুখে ব্রণের জন্য ভালো?
উত্তরঃ অলিভ অয়েলে থাকা ভার্বাস্কোসাইডের মতো পুষ্টি উপাদান গুলো
ত্বকে ব্রণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দূর করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। অলিভ
অয়েল তেল ব্যবহারে মুখে ব্রণের দাগ, মেছতা দাগ সহ বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতেও
অনেক উপকারি।
প্রশ্নঃ অলিভ ও নারিকেল তেল মিশিয়ে মুখে লাগানো যাবে কি?
উত্তরঃ জি, আমরা ত্বকের উজ্জ্বলতায় অলিভ ও নারিকেল তেল মিশিয়ে মুখে
ব্যবহার করতে পারব।
প্রশ্নঃ অলিভ অয়েলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া?
উত্তরঃ অলিভ অয়েলের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, তবে
ব্যক্তিভেদে অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জি বা ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃ মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম ও ১৫টি উপকারিতা
অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের জন্য একটি চমৎকার উপকারী উপাদান। যা আমাদের ত্বককে
গভীরভাবে হাইড্রেট করে এবং নরম ও কোমল করে তোলে। অলিভ অয়েলে রয়েছে
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বকের
একজিমা বা অ্যাকনের মত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের
প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতেও
সাহায্য করে।
এছাড়াও ত্বকের জন্য অ্যান্টি-এজিং গুণাবলী রয়েছে অলিভয়েলে, যা ত্বকে
রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। মেকআপ রিমেভার হিসেবে
বিশেষ কার্যকারী অলিভ অয়েল, সমগ্রভাবে অলিভ অয়েল আমাদের ত্বককে সুস্থ, মসৃণ
এবং প্রাণবন্ত রাখতে সহায়ক। এজন্য অবশ্যই আমাদের আসল অলিভ অয়েল খুঁজে
বের করতে হবে। আশা করি এই পোস্টটি পাড়ার মাধ্যমে ত্বকের যত্নে অলিভ
অয়েল সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় গুলো বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন।
RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।
comment url