ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম ও ১০টি উপকারিতা
ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম ও উপকারিতা না জানার কারণে, আমরা হয়তো অনেকেই হাজার হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন ক্যামিক্যাল যুক্ত প্রসাধনী কিনে ত্বকের ক্ষতি করছি। অযথাই টাকা খরচ না করে চাইলে আমরা ভাতের মাড় দিয়ে ত্বকের সমস্যা সমাধান করতে পারে।
ভাতের মাড় আমাদের ত্বকের জলীয় ভাব অর্থাৎ ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে, ত্বকের বলি রেখা এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে হতে পারে জাদুকরি উপাদান। চলুন জেনে নেই ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক ও উপকারিতা সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম ও ১০টি উপকারিতা
- ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম
- ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক তৈরি
- ভাতের মাড়ের উপকারিতা জেনে নিন
- ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয়
- ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম
- ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
- ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম নিয়ে সচারচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়
- ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক জেনে নিন
- লেখকের মন্তব্যঃ ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম ও ১০টি উপকারিতা
ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম
ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম না জানার কারণে আমরা অনেকেই হয়তো পর্যাপ্ত
উপকারিতা পাচ্ছি না। ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে গেছে, ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে
গেছে, চোখের নিচ দিয়ে কালো দাগ জমেছে, মেছতা বা বলিরেখা সমস্যা আর নয়
দুশ্চিন্তা। কারণ আপনি হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে ক্যামিক্যাল যুক্ত
প্রসাধনী কিনেও ত্বকের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। আপনার বাড়িতে তৈরি
হওয়া ভাতের মাড় ব্যবহার করে দেখতে পারেন আশা করি উপকৃত হবেন।
আরো পড়ুনঃ মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম ও ১৫টি উপকারিতা
চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে ভাতের মাড় মুখে লাগানোর কিছু নিয়ম
সম্পর্কে-
- ত্বকের ব্রণ ও ফুসকুড়ি সমস্যার জন্য ভাতের মাড় ঠান্ডা করে তুলো দিয়ে ব্রণ ও ফুসকুড়ি আক্রান্ত অংশে দিনে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করুন। এতে ব্রণ ও ফুসকুড়ি সমস্যা সমাধান পাওয়া যায়।
- রোদের তাপে হাত মুখ পুড়ে কালো হয়ে গেছে, ভাতের মাড় ঠান্ডা করে তুলো দিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত হাতে এবং মুখে ব্যবহার করুন। এতে রুক্ষ শুষ্ক ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
- ভাতের মাড় গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করলে ত্বকের বিভিন্ন চুলকানি, জ্বালাপোড়া র্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করতে ভাতের মাড়ের সাথে কয়েক ফোটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ও আধা কাপ পরিমাণ পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে ব্যবহার করুন।
- ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ভাতের মাড়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং ১ টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। এতে ত্বকের বলি রেখা দূর হবে, মিশ্রণটি লাগানোর ৩০ মিনিট পর ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ও ত্বকের ডার্কসার্কেল দূর করতে আমরা ভাতের মাড়ের
সাথে কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারি। যা আমাদের
ত্বকের বিভিন্ন ডার্ক সার্কেল দূর করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে আরো বেশি
কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে। চলুন জেনে নিই ঘরোয়া ভাবে ভাতের মাড়ের
ফেসপ্যাক তৈরি ও উপকারিতা সম্পর্কে।
ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক তৈরি
ভাতের মাড়ের ফেসপ্যাক তৈরি ও উপকারিতা সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই। আমরা অনেকেই হয়তো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাজার থেকে হাজার হাজার টাকা দামের ক্যামিক্যালযুক্ত প্রসাধনি ব্যবহার করে, তেমন কোনো উপকার পাচ্ছি না। বা তাৎক্ষণিক উপকার পেলেও তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই চাইলে আমরা ভাতের মাড়ের সাথে প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান যুক্ত করে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারি যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে।
- ক্যামিক্যাল মুক্ত ফেসওয়াস তৈরিতে ৪ চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ফ্রিজে রাখতে পারেন। দিনে ২ থেকে ৩ বার উক্ত মিশ্রণ দিয়ে ফেসওয়াশের বিকল্প হিসেবে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন এতে অনেক উপকার পাবেন।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে, কোমল নরম ও মসৃণ ত্বকের জন্য ২ চামচ ভাতের মাড়ের সাথে ১ চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। উক্ত পেস্ট মুখে ভালোভাবে মালিশ করুন মুখে লাগানোর ৩০ মিনিট পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।
- ভাতের মাড় ছেঁকে নিয়ে জাল করে ঘন করার পর, একটি লেবুর সম্পূর্ণ রস যুক্ত করে মিশ্রণ তৈরি করুন। উক্ত মিশ্রণ ত্বকে ব্যবহার করলে ব্রণ সমস্যা সমাধান পাওয়া যায়।
- ত্বক টান টান করতে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ভাতের মাড়ের সাথে দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন।
- ত্বক কোমল রাখতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ১ টেবিল চামচ ভাতের মাড়ের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ কোকো পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। উক্ত পেস্ট মুখে ব্যবহারের ৩০ মিনিট পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- ত্বকের কালো দাগ দূর করতে ভাতের মাড় সংগ্রহ করে দুইদিন রেখে দিন। এরপর ভাতের মাড়ের সঙ্গে ১ কাপ পরিমাণ পানি মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। এরপর উক্ত মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে তুলো দিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন।
- ব্রণ সমস্যা দূরীকরণে ভাতের মাড়ের সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস ও কয়েক ফোটা ট্রি টি অয়েল যুক্ত করে মিশ্রণ তৈরি করুন। উক্ত মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহারের পর ত্বক শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আশা করি উপরোক্ত দেখানো নিয়মগুলো থেকে আপনার প্রয়োজন মত ফ্যাসপ্যাক
তৈরি করে নিতে পারবেন। বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন ক্যামিক্যালযুক্ত প্রসাধনী
ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আমরা চাইলেই কিন্তু কোন
ক্যামিক্যাল ছাড়া ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের রূপচর্চায় ভাতের মাড় এর ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারি। আশা করি ভাতের মাড় দিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহারে আপনি
উপকৃত হবেন।
ভাতের মাড়ের উপকারিতা জেনে নিন
ভাতের মাড়ের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই সঠিক ভাবে
জানিনা। ভাতের মাড় যা আমরা প্রতিদিনই হয়তো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে থাকি,
কিন্তু এই ভাতের মাড়ের রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। ভাতের মাড়ে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়াও ভাতের মাড়ে
রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২ , বি৬ এবং বি৯ যা আমাদের দেহের শক্তি উৎপাদনে ও
কোষীয় কার্যকলাপে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস খেলে কি ফর্সা হয় ও কিসমিসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
এছাড়াও আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে
ভাতের মাড়ে।ভাতের মাড়ে থাকা অ্যালানটোইনের মত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুলো আমাদের
শরীরের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ভাতের মাড়ে ক্যালরির পরিমাণ
কম থাকায় ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ওজন কমতে সাহায্য
করে। ভাতের মাড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের অন্ত্রের হজম
সমস্যা দূরীকরণ করে এবং আমাদের অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
আমাদের অনেক সময় খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার ক্ষুধা পাই, এতে অতিরিক্ত
খাবার খাওয়াই আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মূল কারণ হচ্ছে শরীরে
হাইড্রেশনের অভাব। ভাতের মাড় নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে হাইড্রেশনের
মাত্রা বজায় থাকে, ফলে আমাদের অতিরিক্ত ক্ষুধা কমায় এবং শরীরের বাড়তি ওজন
কমাতে সাহায্য করে। ভাতের মাড় আমাদের শরীরে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয়
ভাতের মাড় চুলে দিলে কি হয় জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা
সম্পর্কে। অনেককেই বলতে শোনা যায় তার শখের চুল গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,
চুল পড়া যেন প্রায় সবারই একটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ঠিকমত
চুলের যত্ন নেওয়ায় সময় না পাওয়ায় অনেকে সময় চুল পড়া, চুল শুষ্ক ও রুক্ষ
হওয়া, চুলের আগা ফাটা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। অনেকেই হয়তো বাজার থেকে
হাজার হাজার টাকার ক্যামিক্যাল যুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন,
কোন উপকার পাচ্ছেন না।
যারা চুলের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য হতে পারে আপনার ঘরেয় আপনার চুলের
সমস্যার সমাধান। নিশ্চয়ই ভাতের মাড়ের কথা বলছি তা আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
হ্যাঁ, ভাতের মাড়ে রয়েছে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সহ ভিটামিন
বি, সি ও ই । ভাতের মাড়ে থাকা উক্ত উপাদান গুলো আমাদের রুক্ষ শুষ্ক চুলের
জেল্লা ফেরাতে, চুল পড়া সমস্যার সমাধানে, চুলের খুশকি দূর করতে মারাত্মক ভাবে
উপকারী। তাহলে এখন জানতে হবে ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম কি? চলুন জেনে
নেই।
ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা বা ভাতের মাড় চুলে
দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে, আমরা প্রতিদিনই
হয়তোবা ভাতের মাড় ডাস্টবিনে ফেলে দিই। আমাদের চুলের যাবতীয় সমস্যা
সমাধানে ভাতের মাড় হতে পারে অতুলনীয় একটি উপাদান। ভাতের মাড়ে থাকা
অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি, সি ও ই যা আমাদের চুলের জন্য মারাত্মক
উপকারী। এজন্য আমাদের জানতে হবে ভাতের মাড় চুলে দেওয়ার সঠিক নিয়ম
সম্পর্কে।
ভাতের মাড়ের সাথে আমরা পানি যোগ করে পাতলা করে নিতে পারি, এরপর গোসলে শ্যাম্পু
ব্যবহারের পর চুলে উক্ত মাড় ব্যবহার করে ৪ থেকে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে, এরপর
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল পড়া সমস্যার সমাধানে ভাতের মাড়ের সঙ্গে একটি
লেবুর রস যোগ করতে পারেন, তাহলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও গোসলের
সাময় গোসলের পানির সাথে ভাতের মাড় মিশিয়ে গোসল করলে চুল ও ত্বকের উপকারিতা
পাওয়া যায়।
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে হয়তো জানেনা অনেকেই চলুন জেনে নেই, আমরা কি
কি উপায়ে ভাতের মাড় খেতে পারি। আমাদের প্রধান খাবার ভাত হলেও হয়তো ভাতের
মাড় খেতে জানি না বা খায় না অনেকেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা
গেছে শরীর এবং ত্বককে চাঙ্গা রাখতে ভাতের মাড়ের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
এমনকি ভাতের মাড় আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এবং চুল পড়া সমস্যা সমাধানে
অনেক উপকারী।
আমরা সাধারণত ভাত রান্নার শেষের দিকে ভাতে থাকা অতিরিক্ত পানি ছেঁকে নি, সেটিকে মূলত ভারতের মাড় বলা হয়। ভাতে মাড়ের সাথে হালকা লবণ যোগ করেই খাওয়া যায় বা আপনি আরো স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য লেবুর রস বা দারুচিনি যোগ করতে পারেন। ভাতের মাড় দিয়ে আমরা কিছু খাবারো তৈরি করতে পারি। যেমন- স্যুপ তৈরির ক্ষেত্রে আমরা স্যুপ আঠালো করার জন্য কর্নফ্লোয়ারের পরিবর্তে ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারি এতে স্যুপের পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ মেলাট্রিন ক্রিম কতদিন ব্যবহার করতে হবে ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেকে ঝোল খিচুড়ি পছন্দ করে থাকেন, ঝোল খিচুড়ি রান্না করার সময় শেষের দিকে
পানি না দিয়ে পানির পরিবর্তে ভাতের মাড় দেওয়া যেতে পারে। আমরা অনেক সময়
বাসায় বেগুনি বা বেসন ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাজাপোড়া তৈরি করি। বেসন
গোলানোর সময় পানির পরিবর্তে আমরা ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারি। এছাড়াও
আমরা টমেটোর সাথে ভাতের মাড় আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে সস তৈরি করতেও পারি এতে
করে আমাদের খাবারের পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম নিয়ে সচারচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ ভাতের মাড় সারারাত মুখে লাগানো যাবে কি?
উত্তরঃ মুখের ব্রণ সহ বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতে ও ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ভাতের মাড়ের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর
পূর্বে ব্যবহার করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে মুখ
ধুয়ে নিবেন।
প্রশ্নঃ ভাতের মাড় কখন খাবো?
উত্তরঃ আমরা হালকা কুসুম গরম ভাতের মাড়ের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে
পারি। কোমল পানীয়র পরিবর্তে আমরা ভাতের মাড় খেতে পারি। ভাতের মাড় দিয়ে
বিভিন্ন খাবার তৈরি করা যায় যেমন- স্যুপ, খিচুড়ি, সস ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ ভাতের মাড় চুলে লাগালে কি হয়?
উত্তরঃ আমাদের রুক্ষ শুষ্ক চুলের জেল্লা ফেরাতে ও চুল পড়া
সমস্যার সমাধানে ভাতের মাড় হতে পারে কার্যকরী ঘরোয়া একটি সমাধান।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন ভাতের পানি মুখে লাগালে কি হয়?
উত্তরঃ আমরা নিয়মিত ত্বকে ভাতের মাড় ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণের
দাগ, মেছতা দাগ সহ বিভিন্ন কালো দাগ দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে ভাতের
মাড়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্নঃ ভাতের ফ্যান মুখে মাখলে কি হয়?
উত্তরঃ ভাতের ফ্যান আমাদের ত্বককে হাইড্রেট রাখতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে উপকারি ভাতের ফ্যান।
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয়
ভাতের মাড় খেলে কি মোটা হয় এমন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন চলুন জেনে নেই সঠিক তথ্য। ভাতের মাড় যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ভাতের মাড়ে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মিনারেল, ভিটামিন বি১, বি২, বি৬ ও বি৯ যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান। এছাড়াও ভাতের মাড়ে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে।
ভাতের মাড় অনেক ফাইবার এবং কম ক্যালোরি যুক্ত হওয়ার কারণে, ভাতের মাড় খাওয়ার
ফলে আমাদের বেশি সময় ধরে পেট ভরা অনুভব হয়। এতে আমরা খাবার কম খাই, আর
খাবার কম খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত
ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও
সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ বলা যায় ভাতের মাড় খেলে আপনি মোটা নয় বরং
অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক জেনে নিন
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা জানি প্রতিটি খাদ্য উপাদানেরই রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুন, কিন্তু ওই খাবারই অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বা নিয়ম না মেনে খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। তেমনি আমরা নিয়ম না মেনে বা অতিরিক্ত মাত্রায় ভাতের মাড় খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারি। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
আসলে ভাতের মাড়ের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা, ফোলা বা ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় ভাতের মাড় খাওয়ার কারণে বুকের এবং পাছার পেছনের দিকের মাংস ফুলে যেতে দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে ভাতের মাড় খাওয়ার কারণে ঘুমের প্রবণতা পেতে দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রায় ভাতের মাড় আমাদের শরীরে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃ ভাতের মাড় মুখে লাগানোর নিয়ম ও ১০টি উপকারিতা
ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। এটি অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ কারণ এতে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। ভাতের মাড় আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং খাবারের সঠিক পরিপাক নিশ্চিত করে। ভাতের মাড় আমাদের শরীরের জন্য উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভাতের মাড়ে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এনার্জি যা আমাদের শরীরের দুর্বলতা দূর করে।
এছাড়াও ভাতের মাড় আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী। ভাতের মাড়ে থাকা ফাইবার আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে ভাতের মাড়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ভাতের মাড় খাওয়া উচিত নয় তাহলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই পোস্টটি সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
RIPONTECH24 এর নীতিমালা মেনে আমাদের ওয়েব সাইটে আপনার মূল্যবান কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করে থাকি ।
comment url